করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় দেশে টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম ঝুঁকিতে পড়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা থাকলেও গত দুই মাসে কোনো চালান আসেনি। টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন-রাশিয়ার সঙ্গে চলছে আলোচনা ও চিঠি চালাচালি।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে ১২ এপ্রিল পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়েছেন, রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সে দেশে উৎপাদিত করোনার টিকা স্পুটনিক-ভি বাংলাদেশে আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবহার বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করার কথা বলা হয়েছে।
সে পরিপ্রেক্ষিতে রুশ রাষ্ট্রদূত কিছু বিষয় জানতে চেয়েছেন। তার মধ্যে আছে বাংলাদেশের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কী পরিমাণ করোনার টিকা প্রয়োজন, সরকারি যেসব মন্ত্রণালয়, সংস্থা বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে টিকা আমদানি করা হবে তাদের সম্ভাব্য তালিকা। বাংলাদেশে অবিলম্বে টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্ভাব্য তালিকা। এরপর ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে এসব তথ্য চেয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি পাঠানো হয়। ওই দিনই অধিদফতরের মহাপরিচালক বাংলাদেশে আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবহার বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠিয়েছেন। অধিদফতর বলেছে, বাংলাদেশের জন্য স্বল্পমেয়াদে প্রায় ৩ কোটি ডোজ এবং দীর্ঘমেয়াদে ১৪ কোটি ডোজ টিকার প্রয়োজন।
এ টিকা আমদানির জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর,ইপিআই, সিএমএসডি, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সক্ষম
কভিড-১৯ টিকা প্রাপ্তি ও সংগ্রহের বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া প্রস্তাব পরীক্ষা করে এ ব্যাপারে মতামত দিতে সাত সদস্যের কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কমিটি বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া টিকার প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে সুনির্দিষ্ট মতামত দেবে। এ ছাড়া কমিটি টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, টিকা ব্যবহারকারী দেশের তথ্য, করোনার টিকা কেনার প্রস্তাব দেওয়া প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে সুপারিশ করবে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানান, সরকার রাশিয়া, চীনের পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকে টিকা পেতে তৎপরতা শুরু করেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে গ্যাভি-কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি বাংলাদেশকে ১ লাখ ৬১০ ডোজ টিকা বিনামূল্যে সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
চায়না সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন তাদের উৎপাদিত ৫ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেবে বলে জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির পর থেকে দুটি চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে। এ ছাড়া ভারত সরকার উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের হাতে এসেছিল ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। গতকাল পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৭ লাখ ৬১ হাজার ৯০২ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৭ জন।
দুই ডোজের টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রথম ডোজের টিকা যেসংখ্যক মানুষ নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রায় ১০ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে, যা সরকারি হিসাবেই পাওয়া যাচ্ছে। এখন সেরাম ইনস্টিটিউট আবার কবে টিকা সরবারহ করবে তার কোনো নিশ্চয়তা বাংলাদেশ পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম বলেছেন, ‘এখন সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে রাশিয়া ও চীন থেকে টিকা আনার চেষ্টা চলছে।
আমরা বারবার সেরামকে বলছি, তাগাদা দিচ্ছি। এর মধ্যে আমাদের অধিদপতর ও মন্ত্রণালয় দুবার সেরামকে চিঠিও দিয়েছে।আমরা যদি এখান থেকে না পাই তাহলে আমাদের অন্যত্র খুঁজতে হবে। আমরা তা শুরু করে দিয়েছি। আমরা রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ’ রাশিয়া ও চীন থেকে টিকার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে কি না- এ প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, ‘এ ব্যাপারে রাশিয়া ও চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে আমাদের দু-তিনটি বৈঠকও হয়েছে। ’