একাধিক হত্যা ও এক হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে রয়েছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) চারজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন, ২৬নং ওয়ার্ডের আবদুস সাত্তার ও ২৭নং ওয়ার্ডের আবুল হাসান এবং সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হন ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল বিন জলিল।
অভিযোগ উঠেছে, কারাগারে ‘ভিআইপি খেদমতে’ রয়েছেন তারা। কারাগারের প্রধান ফটকে স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, অসুস্থ না হয়েও কারা হাসপাতালে অবস্থান ও ভেতরে থাকা হাজতি দলীয় কর্মীদের সেবাসহ বাড়তি নানা সুবিধা পাচ্ছেন। কারাগারে থাকা এই চার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্থায়ী বরখাস্ত দাবি করেছেন নিহতদের স্বজনরা।
গত বছরের ১০ জুলাই নগরীর কোটবাড়ি সড়কের চাঙ্গিনী এলাকায় ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আলমগীর হোসেন গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে, গত বছরের ১১ নভেম্বর নগরীর পুরাতন চৌয়ারা বাজার এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান চৌধুরী ওরফে জিলানী হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবুল হাসান গত ১৫ মার্চ থেকে, একই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ২নং আসামি আবদুস সাত্তার ২৬ জানুয়ারি থেকে এবং গত ১৯ মার্চ মহানগর যুবলীগ নেতা রোকন উদ্দিনকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় সাইফুল বিন জলিল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। কাউন্সিলরদের মধ্যে আলমগীর হোসেন কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। প্রকাশ্যে খুনের ঘটনায় গত বছরের ২৪ জুলাই তাকে যুবলীগ থেকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ ছাড়া আবদুস সাত্তার মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এবং আবুল হাসান ২৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
নিহত ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনের ছোট ভাই ও নগরীর ২৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ জালাল আলাল গত বুধবার বলেন, আক্তার হত্যা মামলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর জামিন নিতে গিয়ে আদালতের নির্দেশে এখন কারাগারে রয়েছেন। হত্যাচেষ্টা মামলায় গত মঙ্গলবার ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল বিন জলিলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে আমার ভাইকে প্রকাশ্যে খুন করা আলমগীর এখনও কাউন্সিলর পদে বহাল রয়েছেন। আমরা তার স্থায়ী বরখাস্ত চাই।
জানা যায়, কুমিল্লা মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ যুবলীগ নেতা রোকন উদ্দিনকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন সাইফুল বিন জলিল। রোকনকে গাড়িচাপা দেওয়ার পর একটি পেট্রোল পাম্পে গিয়ে দুই হাতে অস্ত্র নিয়ে নাচানাচি করেন সাইফুল। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সাইফুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সাইফুলকে সাময়িক বরখাস্তের পর থেকেই হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা আলমগীরসহ তিন কাউন্সিলরকে স্থায়ী বরখাস্তের দাবি তুলেছেন নিহতদের স্বজনরা। জিল্লুর হত্যা মামলার বাদী ও নিহতের ছোট ভাই ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, কাউন্সিলর হাসাননের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করেছে। এছাড়াও জড়িত রয়েছে কাউন্সিলর সাত্তার। তাদের কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সাইফুলকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। অভিযুক্তদের মামলাগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করছেন। তদন্তে তারা দোষী প্রমাণ হলে তাদের বরখাস্ত করার জন্য আমি স্থানীয় সরকার বিভাগে লিখিতভাবে জানাতে পারি।
মানবাধিকার সংগঠক ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
এদিকে কারাগারে এই চার কাউন্সিলরের বাড়তি সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শাহজাহান আহমেদ বলেন, কাউন্সিলর সাইফুল বিন জলিল সর্বশেষ কোয়ারেন্টাইনে গেছেন এবং বাকিদের মধ্যে যাদের কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে ২/১ জন কারা হাসপাতালে যেতে পারেন। বর্তমানে কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন কারা হাসপাতালে রয়েছেন। সুত্র: আং/ সমকাল