আইসিএলের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎকারী আলমগীর কবির মজুমদার ওরপে লুঙ্গি আলমকে আজ দুপুরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াকাজী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
আটককৃত আসামি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৫নং শুভপুর ইউনিয়নের যশপুর গ্রামের পাশাকোট গ্রামের মৃত কালা মিয়ার মজুমদারের ছেলে আলমগীর কবির মজুমদার ওরপে হুমায়ূন কবির মজুমদার ওরপে আলম চেয়ারম্যান ওরপে আলম হুজুর ওরপে লুঙ্গি আলম। এ সময় তার সহযোগী নজরুল ইসলাম বাবরকেও গ্রেফতার করা হয়। লুঙ্গী আলমকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আলমগীর কবির মজুমদার ওরপে লুঙ্গি আলম মাত্র কয়েক বৎসরের ব্যবধানে শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান। রহস্যময় লুঙ্গি আলমের প্রকাশ্যে কোন ব্যবসা বাণিজ্য নাই। ৫বৎসর পূর্বেও যার নুন আনতে পান্তা ফুরাতো সংসারে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের ভরন পোষনের জন্য ঢাকায় হাতুড়ী কোদাল নিয়ে পুরাতন বাড়ি ভাঙ্গার কাজ করত সেখানে এ অল্প সময়ের ব্যবধানে হাজার কোটি টাকার মালিক হলেন কিভাবে তা নিয়ে চৌদ্দগ্রাম ও কুমিল্লার সর্বত্রে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
অত্যাধুনিক পাজারো গাড়ি, ২স্ত্রীর জন্য ২টি আলাদা গাড়ি, ভাইদের প্রত্যেকের আলাদা গাড়ি, ভাতিজার জন্য আলাদা গাড়ি, ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএস’র ৩টি বিশাল বিশাল অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট, বেশ কয়েকটি ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, পূর্বাচল ও জোয়ার সাহারায় শত শত বিঘা জমি, গ্রামের বাড়িতে ২স্ত্রীর নামে ২টি বাড়ি, ২ভাই ও বোনের নামে আলাদা আলাদা বাড়ি, ভাতিজার নামে আলাদা বাড়ি আরেক চাচাতো ভাই রাজা মিয়া ও জাহাঙ্গীরের নামে আলাদা বাড়ি এবং জনতার দৃষ্টি অনত্রে সরিয়ে নেওয়ার জন্য গড়ে তুলেছেন গ্রামের বাড়িতে সুবিশাল মাদরাসা মসজিদ, এতিমখানা, সাহিখানা, লঙ্গরখানা। মানুষের মুখ বন্ধ করার জন্য দুই হাতে বিলাচ্ছেন টাকা আর টাকা।
কিন্তু হঠাৎ করে এমন কি আলাদিনের চেরাগে সন্ধান পেলো এই লুঙ্গি আলম? কি তার টাকার উৎস? কি তার বৈধ ব্যবসা? সবকিছুই যেন রহস্যঘেরাঃ
জানা যায়, এ লুঙ্গি আলম সম্পূর্ণ সম্পদহীন ভাবে মাত্র কয়েক বৎসর পূর্বেও জীবিকার তাগিদে আইসিএল গ্রুপের মালিক শফিকুর রহমানের প্রতষ্ঠিানে প্রথমে চাকুরী করতেন। পরে তিনি আলাদা হয়ে নিজে একটি কো-অপারেটিভ খুলেছিলেন। সেখানেও যাদের সাথে ছিলো তাদের সাথে বনিবানা না হওয়ায় সেখান থেকেও বিতাড়িত হন। পরে কিছুদিন সর্বহারার মতো দেশের বিভিন্ন জায়গায় সম্পদহীনভাবে দিনাতিপাত করে অবশেষে ধর্মের লেবাস পড়ে শর্শীনার পীরের মুরিদ হয়ে সম্পূর্ণ হুজুর সেজে পুনরায় আইসিএলের শফিকের কাছে ধর্ণা দেন। শফিক তার প্রতিষ্ঠানের জমি ক্রয়/বিক্রয়ের জন্য ব্রোকার/দালাল হিসেবে নিয়োগ দেন। এভাবে তার উত্থান শুরু।
আইসিএলের শফিকুর রহমান জাতীয় পার্টিতে যোগদানের পর এই লুঙ্গি আলমকেই এলাকার রাজনীতি দেখা-শুনার দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে তার নিজ ইউনিয়নের রাজনীতি নিয়ন্ত্রনের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই লুঙ্গি আলমকে ৫নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানান। ২০১৩ সালে আইসিএল বন্ধ হয়ে যায়। শফিকুর রহমান দেশের বাহিরে চলে যায়। জনশ্রæতি আছে, দেশ ত্যাগ করার প্রাক্কালে তার রাজনৈতিক সহযোগি এবং নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে শত শত কোটি নগদ টাকা ও অনেক সম্পত্তি এ লুঙ্গি আলমের নিকট গচ্ছিত রেখে যান। যেন এলাকার লোকদের টাকা পরিশোধ করা যায়। আজকের এই লুঙ্গি আলমের টাকার উৎস এটাই। শফিকুর রহমান পরবর্তীতে দেশে ফিরে এলেও তাকে আর এই টাকা ফেরৎ দেয়া হয়নি এবং এই টাকা দিয়েই এ লুঙ্গি আলম আজ টাকার খেলা খেলছেন।
অবশেষে আজ আইএিল গ্রুপের শতশত কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কুমিল্লার সুয়াগাজী থেকে তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি পুলিশ।