মশার উৎপাতে সারাদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠছে। রক্তচোষা ক্ষুদ্র এই প্রাণীটিই এখন সবার কপালে ভাঁজ ফেলেছে। অফিস, বাসা কিংবা দোকান কোথায়ও বাকী নেই মশার আগ্রাসন।
নিস্তার নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতেও, সেখানেও মশার চলন। গণপরিহনেও মশা করে ভনভন। রাজধানী ঢাকায় এই মৌসুমেও ভয়ংকর চেহারায় ফিরেছে মশা। মশকের বিস্তার রোধও যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সিটি করপোরেশন বছর বছর বাজেট বাড়ালেও মশার যন্ত্রণা কমাতে পারেনি। মশার এই ডামাডোলে আরো দুঃসংবাদ হলো, গেল ফেব্রুয়ারিতেই রাজধানীতে মশার ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় চার গুণ। গবেষণায় মিলেছে এই তথ্য। মশার বাড়াবাড়িতে রাজধানীতে বেড়ে গেছে মশারি, কয়েল আর স্প্রের বিকিকিনিও।
ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জসহ সারাদেশব্যাপি আনাচ-কানাচে, মশার প্রজননস্থল বিভিন্ন নালা-নর্দমায় ও জমে থাকা পানিতে মশক নিধন কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। কয়েল কিংবা আগুন দিয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করেও মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।
বিভিন্ন মানুষের মুখে মুখে শুনা যাচ্ছে , করোনার সাথে সাথে মশাও একপ্রকার মহামারির মত দিনরাত ২৪ ঘন্টা বিষাক্তময় করে তুলেছে জনজীবনকে। সাধারন জীবন যাপনে বাধা গ্রস্থ করছে মশা। রান্নাঘরে দুপুরের খাবার তৈরি করছিলেন রামপুরা এলাকার গৃহিণী সোনিয়া খাতুন। গ্যাসের চুলার পাশেই জ্বলছিল মশার কয়েল। তাঁর ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও জ্বলছে ইলেকট্রিক মশার ম্যাট। সোনিয়া বললেন, ‘খেতে গেলে ভাতের আগে মুখে মশা ঢুকে যায়। সব রুমে কয়েল জ্বালিয়ে রেখেছি। তা-ও উড়ছে মশা।’
একই সুরে কথা বললেন রামপুরার আরেক বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাসায় দেড় বছরের শিশু। সারা দিন ওকে তো আর মশারির মধ্যে রাখা যায় না। কিন্তু কী করব, এত মশার উৎপাত। মাঝেমধ্যে সিটি করপোরেশন এসে ওষুধ ছিটায়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় বলে মনে হয় না।’
শ্যামলীর বনানী রহমান বলেন, ‘ছাদে যাওয়া বাদ দিয়েছি মশার ভয়ে। বাসার ভেতরে এরোসল দিলে মনে হয় ওষুধের ঝাঁজে আমরাই মরে যাব; কিন্তু মরছে না মশা।
রহিম নামে এক বৃদ্ধ জানায়, জীবনের শেষ পর্যায়ে জীবন মৃত্যুর প্রহর গুনছি, এত পরিমান মশা আর কখনও দেখেননি বলেও জানান তিনি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অফিস কলকারখানায় দিনের বেলা কম দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর সারাদেশের মানুষ মশার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে অনেকে।
এদিকে মশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে লাফিয়ে বাড়ছে মশারি, কয়েল ও মশার স্প্রের বিক্রি। গুলশানের রহমান ফার্মেসির বিক্রেতা শামসু বলেন, ‘মশার স্প্রের বিক্রি বাড়ছে। কারণ মশা বাড়ছে। কয়েক দিন ধরে দোকানের মধ্যেও আমাদের কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে। তবে বিক্রি বাড়লেও কয়েল বা মশার স্প্রে কোনোটিরই দাম বাড়েনি।’ যদিও মশারির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা।
সরকারকে দ্রুত একটা পদক্ষেপ নিতে হবে শীঘ্রই । দিন দিন যে হারে মশার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রন না করলে সারাদেশে মশার কামড়ে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশংখা রয়েছে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড নয় শুধু আরোও নানা রোগ জীবানু সৃষ্টি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা।
সারাদেশ ব্যাপি মশা নিধন ও বংশ বিস্তারকে বাধাগ্রস্খ করতে মশার জন্য সর্ব্বোচ স্পে ব্যবহার করা হোক।মশার জ্বালা যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে মানুষ সারাক্ষন মশার কয়েল ব্যবহার করছে, এতে করে পরিবারের শিশুরা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংখা রয়েছে।
গত পঞ্চাশ বছরেও এমন মশার উৎপাত কখনও দেখেননি বলে জানালেন কুমিল্লা টিক্কাচরের চা দোকানদার ইদু ও পাচথুবী টিক্কারচর ব্রীজের বাসিন্দা মাডিচোর মতিন।