আমি কুমিল্লা যে জায়গাটায় বেড়ে উঠেছি তার একটু দুরে পুলিশ লাইন স্কুল এর পাশে ছাতিম গাছ ছিলো , কেননা গন্ধটা আমার পরিচিত। তবে মজার ব্যাপার হলো ছোট বেলা থেকে আমাদের বাড়ীর ভিতরে এত বেশী গাছের মধ্যে বেড়ে উঠেছি যে কোন গাছ সম্পর্কে বাড়তি কোন কৌতুহলই হয় নি( কে জানে অন্যদের বেলায় হয়তো উল্টোটাই হতো!)
মানুষের স্মৃতি থেকে পরিচিত গন্ধ কখনও হারিয়ে যায় না।
২০০৯ সালের দিকে আমি যখন বন্ধুর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড এলাকায় দেখা করতে যাইতাম বিকেলের দিকে,তখন প্রায় সময় পরিচিত গন্ধটি পেতাম। একদিন কুমিল্লার রানীর কুটিরের ভিতরে আমার থিয়েটার স্কুলের শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করলো হঠাৎ- অনতু এই গাছটির নাম কি বলতে পারবা ? আমি নতুন করে গাছটির দিকে তাকিয়ে থেকে স্যার কে বললাম না স্যার নামটি বলতে পারব না।স্যার তখন হেসে উওর দিল একটি নাম ছাতিম গাছ। স্যার আরো বললেন গাছটির মাতাল করা সুবাস নিতে তিনি প্রায়ই না কি চলে যেতেন ‘শান্তি নিকেতনে’। মনে পড়লো ‘ন্য হন্যতে’ তে মৈত্রেয়ী দেবী ছাতিম গাছের কথা বলেছিলেন, কিশোরীকালে যার প্রেমে পড়েছিলেন বলেও বইটিতে উল্লেখ আছে!
আমি এই গাছটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ও দেখেছি আছে একটি মাত্র ছাতিম।ঢাকার কোন এলাকায় এই গাছটি আর আছে কি না আমার জানা নেই। বাণিজ্যিকভাবে এর খুব গুরুত্ব না থাকায় শহরে খুব বেশী দেখা যায় না এই ছাতিম গাছ। তবে আমার মনে আছে সিলেটের মৌলভীবাজারে রাস্তার দুই পাশে প্রচুর ছাতিম গাছ আমি দেখেছিলাম নিজ নয়নে। সম্ভবত সেখানকার লোকেরা বানিজ্যটা এখনও খুব ভালো বুঝে উঠতে পারে নাই। অক্টোবর/ নভেম্বরের দিকে ফুল ফোটে , সাথে এর তীব্র মাদকতাময় সুগন্ধ! রাতের বেলা এই গন্ধ বহুদূর থেকেও পাওয়া যায়।শুধু গন্ধ ই নয় এর সুগন্ধ বারে বার নিতে চায় আমার অতীতকে !!
লেখক: