বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। এটি সমগ্র জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গৌরবের। এই গৌরবের সংবাদটি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণে জাতিংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সে সময় বক্তব্য প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় এক বছর পর আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি । তবুও সরাসরি না, ভার্চুয়ালি। আজ অবশ্য আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি, একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল প্রত্যয়নের সুসংবাদ দেয়ার জন্য। বাংলাদেশ গতকাল (শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে। এসময় বাংলাদেশের জন্য এই উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তারই হাতে গড়া আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। এই কৃতিত্ব এ দেশের আপামরা জনসাধারণের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, একজন নগণ্য সেবক হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমি এই অর্জনকে উৎসর্গ করছি- আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মকে। যারা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।
আল জাজিরার সংবাদ নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা টেলিভিশন কী করল, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্যও নেই। দেশবাসী দেখেছে, তারা কী করেছে!’
বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। তাদের পরিবার কি বসে থাকবে? সুযোগ পেলে তো সব বিরোধীপক্ষ (আল্টার লেফট ও আল্টার রাইট) এক হয়ে যায়। প্রতিটি বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ? তবুও আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তার স্থায়ীত্ব ধরে রাখতেও প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা চায়নি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, আমাকে হত্যাচেষ্টা করেছে, তারা কীভাবে দেশের এগিয়ে যাওয়া সহ্য করবে? তাদের বিরোধিতা থাকবে। এ নিয়ে দেশবাসীকে বলবো, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এরই মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার কাজটি আমরা করছি।
কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ইস্যুতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে লেখক-সাংবাদিকদের নির্যাতনের বিষয়ে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন গড়ে তুলেছি, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়াও আমাদের দায়িত্ব। কেউ যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে না জড়াতে পারে, সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা অপরিহার্য।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমালোচনা যারা করছে, তারা সবকিছু কি অনুধাবন করছে? আজকের এই দিনে আমি অন্য কিছু বলতে চাই না। শুধু এটুকুই বলবো, কারও মৃত্যুই কাম্য নয়। তবে সেটাকে উদ্দেশ্য করে অশান্তিও কাম্য নয়। অসুস্থ হয়ে মারা গেলে কী করার আছে?
২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৪ আসলে তখন সিদ্ধান্ত নেব, কী করবো। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত তার মান ধরে রাখতে হবে। এজন্য আমাদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। আমার মনে হয়, এই কথার মধ্যে সব উত্তর আছে।
করোনা মহামারি মোকাবিলা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো ম্যাজিক নয়, আন্তরিকতা, দায়িত্ববোধ। এ জায়গা থেকে কাজ করেছি। এখানে আমার নয়, বাংলাদেশের জনগণের ম্যাজিক ছিল।সংবাদ সম্মেলনে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ তনয়া শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র তুলে দেন অর্থমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন।