বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় নাসির হোসেন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে বিয়ে করেছেন বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মিকে। এরপর থেকেই আসতে শুরু করে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। নাসিরের বর্তমান স্ত্রী তামিমা আগের স্বামী রাকিব হাসানকে ডিভোর্স না দিয়েই নাসিরকে বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ করেন প্রথম স্বামী রাকিব। তারপর থেকেই শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
তুবা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, মা কখনই আমার তেমন একটা খোঁজখবর নিত না। মায়ের বিয়ের খবর টিভিতে দেখেছি। এ ছাড়া বাবার বিরুদ্ধে আমাকে তুলে নেওয়ার যে অভিযোগ মা করেছে তাও মিথ্যা।
ছোট্ট তুবার অভিযোগ- ওই বাড়িতে নানি আমাকে মারধর করত। আমি নিজের ইচ্ছাতেই বাবার সঙ্গে দাদি বাড়ি চলে এসেছি। এখানেই আমার জন্মদিন পালিত হয়েছে। তা ছাড়া দাদি বাড়ির সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে।
মা আগেও ভালোবাসত না, আর এখন তো সে আরেকজনকে বিয়ে করেছে।
তুবার দাদি বলেছেন, মায়ের বিয়ের কথা জানার পর থেকেই মেয়েটা ভীষণ চুপচাপ হয়ে গেছে। মেয়েটা খুব কষ্ট পাচ্ছে। বিয়ের খবরে অনেক কান্নাকাটি করেছে।
মা তামিমা ও নানি সম্পর্কে তুবা জানায়, নানি তাকে মারধর করত। নানি বাবাকেও দেখতে পারত না। কারণে-অকারণে আমাকে চড়থাপ্পড় দিত। নানি আমাকে সারাক্ষণ ধমকের ওপর রাখত। এদিক-ওদিক হলেই রাগারাগি-গালাগালি করত। সে কারণেই আমি স্বেচ্ছায় বাবার সঙ্গে দাদির কাছে চলে আসি। বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসে। মা আমাকে কখনই তেমন একটা ভালোবাসত না। আদরও করত না।
সে আরও জানায়, বেশিরভাগ সময়ই মা বাসার বাইরে থাকত। নিজে থেকে কখনও আমায় ফোন দিত না। আমি ফোন দিলে ব্যস্ত আছি বা প্লেনে আছি বলে লাইন কেটে দিত। বাবা, দাদি, দাদা, চাচ্চু আমায় অনেক ভালোবাসে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তুবা বলে, মা এখন আর আমায় ফোন দেয় না। আমার সাথে কথাও বলে না। মা অনেক পচা হয়ে গেছে। সে আরেকজনকে বিয়ে করেছে। আপনারা আমার মাকে এনে দিন। আমি মা আর বাবাকে নিয়ে সবাই এক সাথে থাকব।
রাকিবের মা সালমা সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, ১০-১২ বছর আগে রাকিবের সঙ্গে বিয়ে হয় তামিমার। প্রেম করে বিয়ে করায় প্রথমে আমরা মেনে নিইনি। পরে তুবার জন্ম হলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। শুরু থেকেই তামিমার আচরণ কিংবা স্বভাব কোনোটাই ভালো ছিল না। তবু আমার ছেলে আর নাতির মুখ চেয়ে কখনই কিছু বলিনি। তবে রাকিবের বউ থাকাবস্থায় সে আরেকটা বিয়ে করবে সেটি আমাদের কল্পনাতেও ছিল না।
তিনি আরও বলেন, তুবাই প্রথম টেলিভিশনে দেখে আমার কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে, আর বলে যে, মা আবার বিয়ে করেছে। গত ২৬ আগস্ট ছিল তুবার জন্মদিন। সেদিন আমরা কেক কেটেছি, তুবা অনুষ্ঠানে নাচ করেছে। ভিডিওকলে তামিমাকে সব দেখিয়েছি আমরা। সে-ও আনন্দ পাওয়ার ভান করেছে সেদিন। কিন্তু তখনও ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি যে সে এ রকম একটা কিছু করবে।
সালমা সুলতানা বলেন, তামিমা নিজে থেকে ফোন করে কখনই তুবার খোঁজখবর নিত না। তুবা মাকে ফোন করে কথা বলতে চাইলেও নানা ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে লাইন কেটে দিত। মায়ের বিয়ের খবর টিভিতে দেখে মেয়েটা যে কত কষ্ট পেয়েছে তা বলে বোঝাতে পারব না। সারা দিন মনমরা হয়ে বসে থাকে। কারও সঙ্গে তেমন একটা কথাও বলে না। বাড়ির একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তুবা। বন্ধুদের সঙ্গেও সে এখন আর খেলতে যায় না।
উল্লেখ্য, গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেছেন ক্রিকেটার নাসির হোসেন। বিয়েকে স্মরণীয় করতে ভালোবাসা দিবসটিকেই বেছে নেন তিনি। কিন্তু বিয়ের সপ্তাহ পার না হতেই চরম বিতর্ক শুরু হয়েছে।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নাসিরের স্ত্রীকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে আসে। সকাল থেকে সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তামিমার আরেক স্বামী ও সন্তানের ছবি। রাকিব নামে ওই স্বামীর সঙ্গে তার বিয়ে হয় ১১ বছর আগে। সেই ঘরে কন্যাসন্তানের বয়স এখন ৮ বছর।
এর আগে বুধবার নাসির হোসেন ও স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাম্মির আগের স্বামী মো. রাকিব হাসান। মামলায় আগের বিয়ে গোপন রেখে নতুন বিয়ে, অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যভিচার ও মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে রাকিব হাসান এ মামলা করেন।
রাকিবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, মামলায় তামিমা সুলতানা তাম্মিকে এক নম্বর ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৯৪, ৪৯৭, ৪৯৮, ৫০০ এবং ৩৪ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদীর সঙ্গে ১ নম্বর আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক ৩ লাখ এক টাকা দেনমোহর ধার্যে বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং রেজিস্ট্রি হয়। বিয়ের পর থেকে বাদী ও ১ নম্বর আসামি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের সংসারে বাদীর ১নং আসামির গর্ভে একজন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় তুবা হাসান, বয়স-৮ বছর। ১ নম্বর আসামি (তাম্মি) পেশায় একজন কেবিন ক্রু। তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সে কর্মরত। চাকরির সুবাদে তিনি গত ১০ মার্চ সৌদিতে গিয়েছিলেন। করোনা মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন।সুত্র:সময় সংবাদ