ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয়ে গাড়িতে নকল বোমা পুঁতে রেখে চাঁদা দাবির অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি টিম।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। গ্রেফতারের সময় তার হেফাজত হতে চাঁদা দাবির ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।বুধবার (২৭ জানুয়ারি, ২০২১) মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানা এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি, ২০২১) বেলা ১১.০০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম (বার)।
প্রসঙ্গত, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৪ টায় ভারতীয় সন্ত্রাসীর পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাজধানী গুলশানের একজন ব্যবসায়ীর কাছে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে বোমা মেরে তার পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। পর দিন বিকাল ৪ টায় উক্ত ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকারটি পার্কিং করা অবস্থায় গাড়ির ড্রাইভার গাড়ির নিচে বোমা সাদৃশ্য বস্তুর উপস্থিতি দেখতে পায়। বিষয়টি বাড্ডা থানা পুলিশকে জানালে, থানা পুলিশ ডিএমপির সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল টিমকে অবহিত করে। পরবর্তী সময়ে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বোমা সাদৃশ্য বস্তুটি অপসারণ এবং ধ্বংস করে। বিশ্লেষণে দেখা যায় বোমা সাদৃশ্য বস্তুটি একটি অকার্যকর বোমা ছিল। উক্ত ব্যবসায়ীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাড্ডা থানায় একটি মামলা রুজু হয়। এই ঘটনাটির তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয় ডিবি টিম। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষন শেষে উক্ত ঘটনার মূল হোতাকে সনাক্ত করা হয়।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত মূলত ব্যবসায়ীর (ভিকটিম) গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। সে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য় হওয়ার পর একটি কাপড়ের দোকানে চার হাজার টাকা বেতনে সেলসম্যানের কাজ নেয়। কিন্তু অল্প সময়ে দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় সেখান থেকে পালিয়ে আসে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধনী হওয়ার জন্য সে উক্ত ব্যবসায়ীর পরিবারকে টার্গেট করে। এরপর ঘটনার দুই মাস আগ থেকেই সে ব্যবসায়ীর পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করে। সে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি দেয়ার কৌশল শিখে। হিন্দি সিনেমা দেখার কারণে হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা অর্জন করে। এরপর সে লাল স্কচটেপ, পাইপ, ইলেকট্রিক তার, পেন্সিল ব্যাটারি ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বোমা সাদৃশ্য বস্তুটি তৈরি করে নিজের কাছে রাখে। ইতোমধ্যে উক্ত ব্যবসায়ী তার প্রাইভেটকার নিয়ে ঢাকা থেকে লৌহজংয়ে তার এক আত্মীয়ের জানাজায় যোগদান করতে যায়। তখন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি সুয়োগ বুঝে উক্ত ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকারের নিচে স্কচটেপ দিয়ে বোমা সাদৃশ্য বস্তুটি আটকে দেয়।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে রাজধানীতে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদা দাবি করার মতো ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলতে কিছু নেই। কেউ যদি এমন প্রতারণার শিকার হন তাহলে দ্রুত বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করবেন।