1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রানা, ও মেহেবুব হোসেন রিপনের নেতৃত্বে এক বিশাল র‍্যালি গোপালগ‌ঞ্জে দিনমুজুর‌কে হত্যা মামলায় গ্রেফতার, নবজাতক দুই বোন নিয়ে দিশেহারা ছোট ভাই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ কর‌তে হ‌বে, না করলে প্রশাসক নিয়োগ হ‌বে- সাখাওয়াত বাংলাদেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিবে আজারবাইজানে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সিপিজের খোলা চিঠি ড. ইউনুসকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম গ্রেফতার শপথ নিলেন নতুন তিন উপদেষ্টা কু‌মিল্লায় ডাকাতির নাটক সাজিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতিজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ক‌রে চাচা রাজধানীর কাকরাইলে সভা সমা‌বেশ নি‌ষিদ্ধ

ডোপ টেষ্ট করে পুলিশকে চাকুরীচ্যুত করা কতটা যৌক্তিক ! জনগ‌নের নে‌তিবাচক ধারণা ‌কোন দি‌কে ?

এমইএস:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৯০৬ বার পঠিত

এ বিষয়ে লিখতে গেলে বা বলতে গেলে ছাত্রজীবনের প্রসংগটা না টানলেই নয়। একজন ছাত্র স্কুল জীবন পার করে যখন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে পা দেয়। তখন তার একটি বন্ধু সমাজ গড়ে উঠে। হলে থাকলে তো কথাই নেই। বন্ধুই একজন স্টুডে‌ন্টের সবকিছু। মা বলেন, বাবা বলেন, ভাইবোন বলেন ; স্টুডেন্টদের কাছে তার বন্ধুদের গুরুত্ব ঠিক একই রকম। কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি।

হলের জীবনে বন্ধুদের সাথে একত্রে ক্লাস করা, আড্ডা দেয়া, মজা করা, সিনামা দেখা, ঘুরতে যাওয়া, সিগারেট খাওয়া, ইয়াবা, হিরোইন, চড়ষ, ফেন্সিডিল সেবন ইত্যাদি মাদক গ্রহণ করা যেন একটা স্ট্যাটাসে পরিণত হয়ে যায়।

যে স্টুডেন্ট তাদের সাথে এই সংগ দিবেনা তারা ক্ষ্যাত নামে পরিচিত হয়ে উঠে। এমনকি তাকে অসামাজিক হিসেবে ঘোষণা দিতেও দ্বিধা বোধ করে না। একটাকে বলা যায় সংগ দোষ। এই দোষে দুষ্ট হয়ে কেউ সারাজীবন নেশাসক্ত হয়ে যায়; আবার কেউ চাকুরীজীবনে প্রবেশ করে অতীতের এই খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করে মনোযোগ দেয় তার পেশায় এবং তারাই জীবনে সফলতা লাভ করে থাকে। অর্থ কামাই করে অর্থ জমাতেও পারে এবং সামাজিক ও সাংসারিক জীবনে তারা সুখীও হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আবার যে সকল ছাত্র ছাত্রজীবন সমাপ্তি ঘোষণার পরেও কর্মজীবনে, সামাজিক জীবনে, পেশাগত জীবনে সেই ছাত্রজীবনের নেশার আনন্দকে কন্টিনিউ করে তারাই জীবনে অসুখী হয় এবং যা আয় করে তা থেকে বেশির ভাগ অর্থই চলে যায় নেশাদ্রব্য কেনায়।

ছাত্রজীবনের সেই বদ অভ্যাস বলেন, আর মজা করে নেশা করাই বলেন তা অনেকের জীবনে স্থায়ী ভাবে বাসা বেধে নেয়। আমার জানামতে শতকরা ৮০% ছাত্র এই আনন্দ উপভোগ করে ছাত্রজীবনে। এটা কেউ অস্বীকার করলে, আমি বলবো তিনি মিথ্যা বলছেন। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে, কলেজ ক্যাম্পাসে আমারও পদচারণা ছিল। তাই আমি নিজের চোখেই এসব দেখেছি, উপলব্ধি করতে পেরেছি।

এই ছাত্ররাই এখন কেউ সরকারি চাকুরীতে, বেসরকারি চাকুরীতে বা কেউ ব্যাবসায়িক জীবন বেছে নিয়েছেন। কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশের মাটিতে পা রেখে সেখানেই থেকে গেছেন।

আমাদের দেশে ইতোপূর্বে সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের সময় কোন ডোপ টেষ্ট হয়নি। এখন কথা উঠছে, সরকারি চাকুরীতে ঢুকতে গেলে ডোপ টেষ্ট বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। আসলেই এই পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি। চাকুরীতে এডমিশন টেষ্ট দেয়ার আগে ডোপ টেষ্ট করে যারা টিকবেন তাদেরকেই অন্য ধাপে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হবে ঘোষণা দিলে জন সচেতনতা তৈরি হবে। নেশার জগতে আতুরঘরে প্রবেশের পথ ছাত্রজীবনে ছাত্রগন সতর্ক হয়ে যেতে বাধ্য হবে। ছাত্রজীবনে নেশাসক্ত হওয়ার প্রবনতা যথেষ্ট হ্রাস পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আতুরঘরেই নেশার মৃত্যু ঘটানোর ব্যবস্থা করা।

শ্লোগানই বলেন, আর প্রচলিত বাণীই বলেন একটি কথা আছে পুলিশ জনগের বন্ধু। পুলিশ জনগণের বন্ধু হতে পেরেছে কি-না সে সম্পর্কেও আমি বলতে চাইনা।

আমি যেটা বলতে চাই , বর্তমা‌নে পুলিশের ভিতর ডোপ টেষ্ট হচ্ছে। ডোপ টেষ্ট পজেটিভ হলে বিনা সুযোগ সুবিধায় তাদেরকে চাকুরীচুত্য করা হচ্ছে। এমন পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই।

তবে এখানে আমার কিছু কথা আছে;যা নেহায়েতই ব্যাক্তিগত অভিমত বলতে পারেন। আমাদের দেশে দেদারসে মিয়ানমার হতে ইয়াবা আসছে, ভারত থেকে ফেন্সিডিল আসছে, ঢাকার সরকারি ওয়ারহাউসগুলি থেকে বার, মটেল, ফাইফস্টার হোটেল গুলোতে বিদেশি ওয়াইন, বেয়ার পাচার হচ্ছে এবং তা জনগণের নাগালের ভিতর পৌঁছে যাচ্ছে।

অনেক ডিপার্ট্মেন্টের আইনের লোকেরাও দেদারসে এই মাদক সেবন করছে তাতেও কোন সন্দেহ নেই। যাদের এই মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা তারাই মাদক সেবেন, মাদক ব্যাবসায়ীদের সাহায্য করে টু পাইস কামিয়ে নিচ্ছে। যারা ধরা পড়ছে তারা চাকুরীচুত্য হচ্ছে। যারা ধরা পড়ছেনা তারা বহাল তবিয়তেই আছে।

চাকুরীতে এসে যারা নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছেন, মাদক ব্যাবসায়ীদের সহযোগী হয়ে যাচ্ছেন তাদের চাকুরীতে না রাখাই ভাল। তবে এটার বিকল্প পথও আমাদের চিন্তা করা দরকার আছে বলে আমি মনে করি।

সাধারণ জনগণের সন্তানেরা যখন নেশায় আসক্ত হয়ে যায় ;তাদের বাবা মা তাদের নেশাসক্ত সন্তানদেরকে ভাল করার জন্য পুলিশের হাতেই তুলে দিচ্ছে। পুলিশ নেশাসক্ত ছেলেদেরকে বুঝে নিয়ে ভাল করার জন্য মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে তাদের ভর্তি করে দিচ্ছে।অথবা ভাল পরামর্শ ও মো‌টি‌ভিশ‌নের মাধ‌্যমে ও সাম‌য়িক শা‌স্তি দি‌য়ে ভাল জীব‌নে ফি‌রি‌য়ে আন‌তে সফলতা অর্জন ক‌রে থা‌কে।

পুলিশ মাদকাসক্তদের দায়িত্ব নিয়ে মাদকাসক্ত পিতামাতাদের দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করছে। আর আমাদের পুলিশ সদস্য যারা মাদক সেবনে ধরা পড়ছে তাদেরকে আমরা চাকুরীচুত্য করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তার সংশোধনের জন্য কাদের হাতে তুলে দিচ্ছি?

মাদকসেবী পুলিশ সদস্যদেরকে চাকুরীচ্যুত করে কার হাতে ছেড়ে দিচ্ছি ?

তাদেরকে সংশোধন করার দায়িত্ব কার? আমাদের উপর কি সংশোধনের দায়িত্ব কি পরে না? একজন নেশাগ্রস্থ পুলিশ সদস্যকে চাকুরীচু্ত্য করলে একটি বিপদ আছে ;যেটা আমরা কেউ মাথায় নিচ্ছিনা।সেটা হলো, একজন পুলিশ সদস্য ট্রেনিং প্রাপ্ত সদস্য। নেশাসক্ত পুলিশ সদস্যের সাথে মাদকব্যাবসায়িদের যোগসুত্র আছে। চাকুরীচ্যুত করলে সে মাদক ব্যাবসায়ীদের সাথে হাত মিলে মাদক ব্যাবসায়ী হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। কারণ তার সব পথ ঘাট চেনা। বরং নেশাসক্ত পুলিশ সদস্যের কাছ থেকেই আমরা তথ্য উদঘাটন করতে পারি কারা কারা মাদকদ্রব্য বিক্রির সাথে জড়িত, মাদকের স্পট চিনে নিতে পারি।

চাকুরীচুত্য নেশাগ্রস্থ বিপথগামী পুলিশ সদস্য তার নিজের পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে, রাস্ট্রেরের কাছে সত্যই একটি বড় বোঝা। এ বোঝা বয়ে বেড়াতে কেউ-ই চায় না। সবাই তাকে ঘৃণার চোখে দেখে।

নেশাসক্ত চাকুরীচুত্য পুলিশ সদস্য যদি উলটো পথে হাটে, তাতে কি আমাদের ডিপার্ট্মেন্টের সুনাম বৃদ্ধি পাবে না-কি কমবে? আমি মনে করি তাতে পুলিশের ভাবমূর্তি আরও বেশি ক্ষুন্ন হবে।

কারন সবাই চাকুরীচুত্য পুলিশকে কিন্তু পুলিশ বলেই বলবে এবং পুলিশ নেশার জগতে আছে তা জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবেই। জনমনে আমাদের সম্পর্কে ধারণা এমন হবে যে, যারা নিজেদের সদস্যদের ভাল করতে পারে না তারা কিভাবে সমাজের অন্য মাদকাসক্তদের ভাল করবে?

এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় ; এখন সেটা নিয়ে দু একটা কথা বলবো। আমরা প্রাথমিক ভাবে সকল সদস্যদের ডোপ টেষ্ট করিয়ে নিই। যাদের ডোপ টেষ্ট পজেটিভ হয়েছে, তাদেরকে ভাল পুলিশ থেকে আলাদা করে নিই। এরপরে আমরা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে একটি সেফ হোম করে সেখানে মাদকাসক্ত নিরাময়ের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করি। সুস্থ হলে আবার তাদেরকে কাজে লাগাই। এতে মাদকাসক্ত সদস্যদের নুতন জীবন ফিরিয়ে দেয়া হবে।তার সংসার বাচবে, ছেলেমেয়েরা সমাজে ঘৃনার পাত্র হবেনা। তাদের পারিবারিক টেনশন কমে যাবে। পক্ষান্তরে আমাদের ডিপার্ট্মেন্টের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।হাতের পাচ আংগুল যেমন সমান নয়, ঠিক তেমনই পুলিশের সকল সদস্যই সমান এবং ভাল হবে এটা আশা করা ভুল।

আমরাই যদি আমাদের নিজেদেরই সদস্যদের কন্ট্রোল না করতে পারি তাহলে কে তাদের কন্ট্রোল করবে? বাইরের লোক? তা কি সম্ভব? নেশাসক্তদের আমরা দোষী ভাবতে পারি কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা তো দোষী নয়! তাদের পরিবারের সদস্যদের কথা কি আমাদের ভাবা উচিৎ নয়! নেশাসক্ত পিতার চাকুরীচুত্যের কারণে তার স্ত্রী, সন্তান সব জায়গায় কি হেনস্থা হবে না?

নেশাসক্ত পুলিশ সদস্যদের সেইফ হোমে রেখে চিকিৎসা করার পর যদি সে ভাল নাই-বা হয়। তাহলে চাকুরীচুত্য করলে তখন আর বিবেকের দংশন থাকবেনা। অন্ততঃ এইটুকু তো বলতে পারবো নেশাসক্ত পুলিশ সদস্যদের ভাল করার উদ্যোগ নিয়েছিল ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু তারা ভাল হয়নি। ওরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ডিপার্টমেন্টকে দায়ি করে কথা বলতে পারবেনা। ডিপার্টমেন্টে আমাদের যারা সিনিয়র অফিসার আছেন এই দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করা দরকার।

উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে আমার সবিনয় অনুরোধ বিষয়টি আন্তরিকতার সহিত বিবেচনা করে দেখবেন আশা করি।

লেখক:-

এএসপি মোস্তফা হারুন, ৫ এপিবিএন উত্তরা, ঢাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com