আমরা গল্প, উপন্যাসের হিরোদের গল্প পড়ি। সিনেমা, নাটক পর্দার সুপার হিরোদের মানবিক কাজ থেকে উৎফুল্ল হয়ে যাই। পর্দার আড়ালে বাস্তব জীবনের অনেক সুপার হিরো থাকে যারা সব সময়ই জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত। আবার এসব সুপার হিরোদের যেসব মানুষ তৈরি করে তারা সুপার হিউম্যান।তাদের নিয়ে গল্প, মুভি, কবিতার ছন্দ, গানের কলি, উপন্যাসের সংলাপ হয় না। অথচ এই মানুষগুলোই পথ দেখায়।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী এমন একটা সুপার ইউনিট রাষ্ট্রের সেবায় তার সুপার হিরোদের নিয়ে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, মামলা গ্রহণ, বিচারে সহায়তা, সড়ক শৃঙ্খলা ও ভিআইপি নিরাপত্তা-প্রটোকলসহ নানাবিধ দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ রেঞ্জ, “ঢাকা রেঞ্জ”। ঢাকা রেঞ্জ জনসেবায় মডেল। ১৩টি জেলা, ৯৬টি থানা ও ৪৩টি সার্কেলের কয়েক কোটি জনসংখ্যার নিরাপত্তা, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ। আর এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞের দায়িত্ব বন্ঠন, তদারকি, জনগণের নাগরিক সুবিধা আদায়ের নিশ্চয়তা দিতে একজন মাস্টারপিস পুলিশ কর্মকর্তা অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন মেধা, মনন, প্রজ্ঞায়।
নতুন নতুন কর্মপন্থা তৈরি করে অধীনস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের দিয়ে ম্যাজিশিয়ানের মত সেরাটুকু আদায় করে নিয়ে আসছেন। তিনি গল্পের হিরোদের চেয়ে বেশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ প্রফেশনে, নীতি নৈতিকতা, আদর্শে সুপার হিউম্যানের মত, স্ট্রাটেজিতে যেন সান জু’র মত শৈল্পিক ও নিখাদ কৌশলী ও পরিকল্পিত। তিনি ঢাকা রেঞ্জের অভিভাবক, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) মহোদয়। যার মেধা, শ্রমে, বিশ্লেষণে বদলে গেছে ঢাকা রেঞ্জ।
সাধারণ নাগরিকগণ বিভিন্ন কারণে, প্রয়োজনে সাধারণ ডাইরি করতে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে সাধারণ ডাইরি করতে আসা নাগরিকরা হয়রানির শিকার হতো। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয় ঢাকা রেঞ্জের অধীন থানাগুলোকে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে এসেছেন।
জিডি বা মামলা হওয়ার পর বাদীকে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ফোন করা হচ্ছে এখন। কোন অসাধু পুলিশ সদস্য যদি কোন অনৈতিক দাবি করে, অর্থ আদায় বা পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সে ব্যাপারে বাদীদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। পুলিশকে জনবান্ধব হিসেবে তৈরি করতে, পুলিশ জনগণের বন্ধু, পুলিশ জনতার সেবায় নিয়োজিত এই সিস্টেমকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয় ঢাকা রেঞ্জের সব থানা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে যাচ্ছেন। ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের প্রতিটি পদক্ষেপের নজরদারি করে যাচ্ছেন।
জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসেছেন। তাইতো তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দৃঢ়তার সাথে, পুলিশের কোনো পথভ্রষ্ট সদস্য যদি অপরাধ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও লোকজনকে হয়রানি করে তাহলে আপনারা নির্ভিকভাবে এগুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরবেন। যেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। আপনাদের নিউজে সামগ্রিকভাবে পুলিশ বাহিনী উপকৃত হবে।
বৈরী প্রকৃতির রুক্ষমূর্তি কখনোই দমাতে পারেনি স্যারকে। যেখানেই মানবিক বিপর্যয়, যেখানেই সহযোগীতার হাত বাড়ানোর দরকার সেখানেই শুরুটা সব সময় তিনি করেছেন। সমাজ বিচ্ছিন্ন এবং পশ্চাৎপদ জীবনযাত্রায় হিজড়া সম্প্রদায় সামাজিক ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য মহৎপ্রাণ কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, আমাদের ঢাকা রেঞ্জের অভিভাবক, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাইরে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। সেইজন্য ঢাকা রেঞ্জের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সার্ভিসটা প্রদানের নির্দেশ এবং মনিটরিং করে যাচ্ছেন। এইতো আগস্ট মাসে গত ঈদুল আযহায় তিনি ১৬০০ যৌনকর্মীর ঘরে কোরবানির মাংস উপহার প্রদান করলেন। দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীর সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের মধ্যে শিক্ষা-উপকরণ বিতরণ করে তাদের একটা সুন্দর জীবন গঠনের রাস্তা তৈরি করে দিলেন।
যৌনকর্মীদের জানাজা নামাজ হয় না। শেষ প্রয়াণে যেন সর্বোচ্চ সম্মানটুকু পায় ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী এই মহৎ উদ্যোগটা হাতে নেন শ্রদ্ধেয় স্যার। জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে ঢাকা রেঞ্জের সকল নাগরিক এই বাংলাদেশ পুলিশের পেশাগত ও মানবিক সব সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে। বিভিন্ন মহৎকর্ম এর মাধ্যমে স্যার শুরুটা করে দিয়েছেন। পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়রদের। নবসূচনা করে যাচ্ছে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনার দুর্যোগকালে ক্রাইসিস মোমেন্টে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যায় বাংলাদেশ পুলিশের ২ লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য। যুদ্ধের ময়দানে আহত যোদ্ধাই যদি সুস্থ না থাকে যুদ্ধ করবে কিভাবে?
করোনায় আক্রান্ত সম্মুখ সারির পুলিশ সদস্যদের পাশে দাঁড়ান ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয়। ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা পুলিশের করোনা আক্রান্ত প্রতিটি সদস্যের খোঁজ নিয়েছেন, হাসপাতালে গিয়েছেন। আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবক হিসেবে। নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ফলফলাদি, মেডিসিন থেকে শুরু করে মুঠোফোনে সার্বক্ষুণিক খোঁজ নিয়েছেন তিনি। এই যে অনুপ্রেরণা, এই যে প্রেষণা। যেজন্য সব পুলিশ সদস্যরা অনুপ্রাণিত হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পেশাদারিত্ব প্রমাণ করতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাইওয়েগুলো ঢাকা রেঞ্জের আওতাভুক্ত। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। একটা সময় অপরাধীরা মহাসড়কে গাছ ফেলে রাস্তা আটকিয়ে রাতভর ডাকাতি করতো। পত্রিকার পাতায় প্রতিনিয়ত শিরোনাম হতো ডাকাতদের আক্রমণ, ছিনতাই! ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ হাইওয়েতে এখন সজাগ দৃষ্টি রাখায়, সিসিটিভি মনিটরিং করায় মহাসড়কে ডাকাতি একেবারেই কমে গেছে। আমাদের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয় প্রায়শই জটিকা সফরে চলে আসেন বিভিন্ন সার্কেল অফিসে, জেলা পুলিশ কার্যালয়ে।
সরেজমিনে মনিটরিং করে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন জুনিয়র কর্মকর্তাদের। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা রেঞ্জ অন্যন্য। আর ঢাকা রেঞ্জের এই সফলতার প্লে মেকার, গেইম চেঞ্জার, মাস্টারপিস পুলিশ কর্মকর্তা,১৭তম বিসিএসে সুপারিশকৃত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), কর্মক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) প্রাপ্ত, আমাদের ঢাকা রেঞ্জের অভিভাবক, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম(বার) মহোদয়!
লেখক : খোরশেদ আলম
অতি:পুলিশ সুপার নারায়নগঞ্জ
ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত