কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে ৫ নভেম্বর এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই সময় লাশের কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিশ আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে তাঁর পরিচয় পেয়ে যায়। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ জানতে পারে, হত্যার পর ওই নারীর লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল। ওই নারীকে হত্যার অভিযোগে ঘটনার ১০ দিনের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, লাশটি নীলফামারী সদর উপজেলার এক ব্যক্তির স্ত্রীর (৪৩)। তাঁকে হত্যার অভিযোগে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বহরকাটি গ্রামের হানিফ মোল্লা (৩০), আলামিন খলিফা (৪০) এবং টাঙ্গাইলের আবদুর রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বামীর সঙ্গে প্রায় সাত বছর ধরে ওই নারীর কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। ঢাকায় থাকা অবস্থায় তাঁর সঙ্গে টাঙ্গাইলের আবদুর রশিদের পরিচয় হয়। তিনি রশিদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি রশিদের সঙ্গে বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় থাকতেন। তবে ওই নারীর পরিবারের কেউ বিষয়টি জানতেন না। গত ২২ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরদিন থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৪ নভেম্বর ওই নারীকে বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে নীলফামারী নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন রশিদ। এরপর অ্যাম্বুলেন্সটি রাজবাড়ী জেলা হয়ে কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে দিয়ে আসে। পথে কুষ্টিয়ার খোকসা সীমানায় আসার পর রশিদ তাঁর সহযোগী আলামিন ও অ্যাম্বুলেন্সচালক হানিফের সহায়তায় বালিশচাপা দিয়ে ওই নারীকে হত্যা করে লাশ সড়কের পাশে ফেলে রেখে যান। পুলিশ ৫ নভেম্বর তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিচয় শনাক্তের জন্য পুলিশ লাশের আঙুলের ছাপ নেয়। এরপর পুলিশ জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে জানতে পারে, লাশটি ওই নারীর। এ ঘটনায় ৬ নভেম্বর ওই নারীর ভাই কুমারখালী থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও তদন্ত করে গত শুক্রবার বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে অ্যাম্বুলেন্সচালক হানিফ মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কুষ্টিয়ার একটি আদালতে হানিফ মোল্লা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার গাজীপুর থেকে আবদুর রশিদকে ও আজ ভোরে বরিশাল থেকে আলামিন খলিফাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাড়ি টাঙ্গাইলে হলেও আবদুর রশিদ গৌরনদীতে স্বর্ণকার হিসেবে কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে ঢাকায় যেতেন তিনি। টাঙ্গাইলে তাঁর পরিবার থাকে। ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর চিকিৎসা করালে পরিবারের কাছে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যাবে—এই আশঙ্কা থেকে তিনি ওই নারীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনা থেকেই ৪ নভেম্বর রশিদ ওই নারীকে হত্যা করেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, এ হত্যা মামলার কোনো ক্লু ছিল না। তারপরও পুলিশের একটি টিম কয়েক দিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করে এ হত্যাকাণ্ডের সব মোটিফ উদ্ধার করেছে। প্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।