চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে নেমে জেলেদের হামলায় নৌ-পুলিশের ২০ সদস্য আহত হয়েছেন।রোববার (২৫ অক্টোবর) সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীরচর এলাকায় মেঘনা নদীতে অভিযানের সময় জেলেরা এ হামলা চালালে পাল্টা রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে জানায় নৌ-পুলিশ। জেলেদের ছোড়া ইট-পাটকেলে আহত নৌ-পুলিশের সদস্যরা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নৌ- পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোর রাত থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার আকাশ পথে এবং নৌপথে নৌ- পুলিশ পদ্মা ও মেঘনা নদীর বেশ কয়েকটি এলাকায় যৌথ অভিযান শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টার অভিযান শেষে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ঢাকায় ফিরে যায়। তবে নদীতে শতাধিক জনবল নিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখে নৌ- পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীরচরের একটি খালে বেশ কিছু জেলের নৌকা দেখে। এসময় সেখানে নৌ- পুলিশের বহরটি অভিযান চালাতে যায়। কিন্তু সংঘবদ্ধ জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নৌ- পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে অন্তত ২০ জন পুলিশ আহত হন।
হামলায় গুরুতর আহতরা হচ্ছেন, নৌ- পুলিশের হেড কোয়ার্টারে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফরিদা পারভিন (৩৬), সহকারী পুলিশ সুপার মো. হেলাল উদ্দিন (৬৫), উপ-পরিদর্শক মো. ইলিয়াস মাতাব্বর (৩০), নায়েক মো. শাহজালাল (২৫), ইকবাল হোসেন ((৪৫), মুজাহিদুল ইসলাম (৪১), মো. মামুন (২৮), ফেরদৌস শেখ (৫৬), নিলয় দেব (২৫), কনস্টেবল প্রসেনজিত দাস (২৮), আল আমিন (২৫), মো. কাউসার (৩০) এবং মো. মোনায়েম (২৬)।
নৌ- পুলিশ হেড কোয়ার্টারে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফরিদা পারভিন জানান, তিনিসহ অন্যরা লঞ্চ ও স্পিডবোট থেকে তীরে নামা মাত্র কয়েকশ’ জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা চারদিক ঘেরাও করে হামলা চালায়। এসময় জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দেশি অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে। এসময় হামলার শিকার পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে শর্টাগনের ফাঁকা গুলি ছুড়ে আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এদিকে, আহতদের দুপুরে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরমধ্যে গুরুতর আহত ৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নৌপথে ঢাকায় পাঠানো হয়।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুজাউদৌলা রুবেল জানান, আহতদের বেশির ভাগেই মাথায় ও শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম হয়েছে। অন্যদিকে, রোববার ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া অভিযানে প্রায় শতাধিক মাছ ধরা নৌকা ডুবিয়ে দেয় নৌ- পুলিশ। আর এই ঘটনার পর বেপরোয়া জেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘটিত ভাবে নৌ- পুলিশের ওপর এই হামলা চালায়।
চাঁদপুর নৌ থানার ওসি কবির হোসেন খান জানান, হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পর সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রসঙ্গত, প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় গত ১৪ অক্টোবর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ বিচরণ করে এমন নদ- নদীতে সব ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এসময় বিক্রয়, পরিবহন ও মজুদও নিষিদ্ধ করা হয়।