নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চরজব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরা করে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ। নিহতের ছেলে হুমায়ুন ও তার ছয় সহযোগী মিলে ওই নারীকে হত্যা করে খণ্ডিত টুকরোগুলো ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার অফিসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্চের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।তিনি জানান, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথমে ভিকটিমের ছেলে হুমায়ুন কবির হুমা (২৮) থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামলে হত্যার সাথে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একইসাথে তার সাত সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
সাত আসামির মধ্যে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। একই সাথে আটক ভিকটিমের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল ও ভিকটিমের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, নিহত ওই নারীর ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে ছিল। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মা ভিকটিমকে জিম্মায় রেখে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চার লাখ টাকা সুদের ওপর ঋণ নেন। ঋণ থাকা অবস্থায় দেড় বছর আগে বেলাল মারা যান। এরপর বেলালের ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ দিতে থাকে।
হুমায়ুন তার মাকে এ বিষয়ে অবহিত করে। হুমায়ুন তার মাকে জানান মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে বেলালের ঋণ পরিশোধ করার জন্য। এতে তার মায়ের জোর অসম্মতি ছিল। অপরদিকে ভিকটিম তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিল। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য তিনি ভাইকে প্রায় চাপ প্রয়োগ করতেন। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমন ভিকটিমের ওপর বেজায় ক্ষুদ্ধ ছিলেন। এ ছাড়াও ভিকটিমের বাড়ির পাশের প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদের বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। তাই তারাও হুমায়ুনকে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করে।
হুমায়ুন জবানবন্দীতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ হামিদকে বাকি আট শতাংশ ইসমাইলকে দেয়া হবে বলে মৌখিকভাবে সিন্ধান্ত হয়। তারপর মায়ের জমি সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেয়া হবে।
এ প্রতিশ্রুতিতে সবাই গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরে হুমায়ুন, কালাম, সুমন ও অন্য আসামিদের সহযোগিতায় ওই রাতের কোনো একসময়ে ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে ভিকটিমকে হত্যা করে বটি, চাপাতি, কোদাল দিয়ে পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে শরীরের পাঁচ টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে তারা।
প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো: আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। নুরজাহান বেগম উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত আবদুল বারেকের স্ত্রী। তিনি আট ছেলে ও এক মেয়েসহ ৯ সন্তানের জননী।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর জাহাজমারা গ্রামের প্রভিডা ফিডে পিছনের একটি ধানক্ষেত থেকে ওই গৃহবধূর টুকরো টুকরো লাশের সন্ধান পায়।এর আগে ছেলে হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, বুধবার ভোর থেকে তার মা নিখোঁজ ছিলেন। পরে স্থানীয় এক নারী বিকেলে ধানক্ষেতের আইলে শামুক খুঁজতে যেয়ে একটি টুকরো টুকরো লাশ দেখতে পায়। পরে হুমায়ুন ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মায়ের লাশ শনাক্ত করেন।