কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত শুধু কক্সবাজার নয়, গোটা বাংলাদেশের গর্ব। আর এই সৈকত ভ্রমণে আসেন প্রতিবছর লাখ লাখ দেশি বিদেশি পর্যটক। কিন্তু এই গর্ব খর্ব করার অশুভ প্রতিযোগিতা অতীতে সফল হয়নি কোন দিন।
এখন আবারো শুরু হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে খন্ডিত করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের অশুভ প্রতিযোগিতা। রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের জঙ্গল খুনিয়াপালং এলাকার দরিয়ানগর পয়েন্টে উন্মুক্ত সাগরে যাত্রী টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও উখিয়া উপজেলার ইনানিতেও হোটেল রয়েল টিউলিপের পাশে ইসিএ’তে সৈকত দিখন্ডিত করে সাগর থেকে বালু তুলে জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে নষ্ট হচ্ছে সৈকতের প্রতিবেশ অন্যদিকে খন্ডিত হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের গর্ব পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
সমুদ্র সৈকতের প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) সৈকত খন্ডিত করে যাত্রী টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণ বন্ধে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’। গত রোববার সকালে দফতর দুটিকে চিঠি দিয়ে দ্রæত পরিবেশ ধ্বংসকারি এসব কর্মকান্ড বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সর্বশেষ সংশোধিত ২০১০) অনুসারে ১৯৯৯ সালে কক্সবাজার-টেকনাফ সমুদ্র সৈকত, সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার গ্রাম, কৃষিজমি, পাহাড়, জঙ্গল, বনভূমি, সমুদ্র সৈকত, খাড়ি, বালিয়াড়ি, ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় জলাভূমিসহ এলাকাকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৭ ও বহাল রয়েছে।
এ অবস্থায় সৈকতের ইসিএ’তে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের জঙ্গল খুনিয়াপালং এলাকার দরিয়ানগর পয়েন্টে উন্মুক্ত সাগরে যাত্রী টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে অনুমতির আবেদন জানিয়েছে। এছাড়া উখিয়া উপজেলার ইনানিতেও ইসিএ’তে সৈকত দিখন্ডিত করে সাগর থেকে বালু তুলে জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর এ ব্যাপারে কোন অনুমতি দেয়নি বলে জানা গেছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়, প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকায় উন্মুক্ত সাগরে যাত্রী টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণ করা হলে সমুদ্র সৈকতের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, প্রাণি ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংস, ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট, পরিবর্তন, ভাঙন সৃষ্টি, মাটি, পানি, বায়ু, শব্দ দূষণ এবং প্রতিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও এটি বাস্তবায়িত হলে সৈকত খন্ড-বিখন্ড হয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের মর্যাদা হারাবে কক্সবাজার। এর দেখাদেখি আরো অসংখ্য জেটি গড়ে উঠতে পারে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে।
গত সোমবার দুপুরে ইনানীর ঘটনাস্থলে মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। কক্সবাজার জেলা শাখা আয়োজিত এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে পরিবেশবাদীরা পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) যেকোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থে একটি তারকা হোটেলের (হোটেল রয়েল টিউলিপ) পাশে এ বাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্য কি? এখানে তো রাষ্ট্রের কোন স্বার্থ দেখি না। তাহলে কি প্রভাবশালীদের স্বার্থেই রাষ্ট্রের অর্থগুলো ব্যয় করা হচ্ছে?
সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, সৈকতের পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় এই ধরনের বাঁধ নির্মাণের আগে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পরিবেশ সমীক্ষা করা উচিৎ। পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়াই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একদিকে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের অর্থ অপচয় ঘটছে।
উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ও একটি চক্র সৈকতে এভাবে জেটি নির্মাণ করে খন্ড খন্ড করে দিতে চেয়ছিল দেশের গর্ব দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। কিন্ত কক্সবাজারের পরিবেশ বাদীদের আন্দোলনের মুখে সেই অশুভ পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে গিয়েছিল।
সুত্র: ইনকিলাব