পবিত্র কুরআন মাজীদ আল্লাহর নাযিলকৃত সর্বশেষ আসমানি কিতাব। কুরআনকে বলা হয় মানবতার মুক্তির দিশা। কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য হেদায়েতের মাধ্যম হিসেবে আল্লাহ কুরআনকে মনোনীত করেছেন । পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত কোরআনকে রক্ষার অঙ্গীকারও করেছেন।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমিই তার রক্ষক।’ -(সুরা হিজর, আয়াত : ৯)
কুরআন তিলাওয়াতকারী ও সংরক্ষণকারী, তা অনুযায়ী আমলকারীদের সর্বোত্তম ব্যক্তি বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৮)
হাফেজরা আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী কুরআনের ধারক। তারা সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সম্মানিত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতকারীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) জানিয়েছেন, তারা আল্লাহর পরিজন। ‘কুরআন তিলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তার বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫)
পবিত্র কুরআন হিফজ করা, চর্চা করা এতটাই ফজিলতপূর্ণ কাজ যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার হিফজকারীদের ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কুরআনের হাফেজ পাঠক লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতাদের মতো। খুব কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কুরআন পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে। (বুখারি: ৪৯৩৭)
কুরআনের জ্ঞান ও তার তিলাওয়াতের তাওফিক আল্লাহর অনন্য নিয়ামত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনও ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯)
কুরআন এমন নিয়ামত, যে নিয়ামতের ব্যাপারে ঈর্ষা করা জায়েজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা তাকে বলে, হায়! আমাদের যদি এমন জ্ঞান দেয়া হতো, যেমন অমুককে দেয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম। অন্য আর এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদ দেয়া হতো, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০২৬)
সাহল ইবন মুআজ আল-জুহানী (রা.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তা অনুসারে আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে এমন মুকুট পরিধান করানো হবে, যার জ্যোতি সূর্য্যরে কিরণের চাইতেও উজ্জল হবে। যদি মনে করা হয় যে, সূর্য তোমাদের কারও ঘরের মধ্যে আছে (এ মতাবস্থায় তার উজ্জলতা যেরূপ প্রকাশ পাবে, এর চাইতেও অধিক উজ্জল মুকুট তাদেরকে কিয়ামতের দিন পরিধান করানো হবে)। অতএব যে ব্যক্তি নিজে কুরআন পাঠ করে তার উপর আমল করে, তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো!’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৩)। সংগৃহিত অনলাইন