কুমিল্লার দাউদকান্দিতে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যা মিশনে সময় লেগেছে মাত্র দেড় মিনিট। এই মিশনের মাস্টারমাইন্ড বহু খুনের আসামি শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার। মিশন বাস্তবায়নে সোহেল শিকদার বাহিনীর একাধিক সদস্য ঘটনাস্থল গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাহ এলাকার আশপাশে অবস্থান করে জামালের গতিবিধি লক্ষ্য করে। সোহেল শিকদারের নেতৃত্বে চূড়ান্ত বৈঠক শেষে রোববার রাত ৮টার দিকে বোরকা পরিয়ে সুজন এবং আরিফসহ তিনজনকে অপারেশনে পাঠানো হয়। তারা জামালকে গুলি করে হত্যা করে। মামলার এজাহার এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ২ দিন পর মঙ্গলবার রাতে নিহতের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ৯ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলো-সুজন, আরিফ, ইসমাঈল, সোহেল শিকদার, বাদল, শাকিল,শাহ আলম, অলি হাসান ও কালা মনির।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারসহ পাশের তিতাস উপজেলার মাদক এবং চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শাহীনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার বাহিনীর সঙ্গে তিতাসের রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধ চলছিল। সোহেল শিকদারের রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। দাউদকান্দি, তিতাস, হোমনা, মেঘনা এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ বাহিনীর কর্মকাণ্ড। খুন, খারাবি, মাদক, অস্ত্র, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এ বাহিনীর মূল কাজ। ইতঃপূর্বে শিকদার বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ডে যারাই পথের কাঁটা হয়েছে তাদের অনেককেই প্রাণ দিতে হয়েছে। গৌরীপুর বাজারসহ তিতাস উপজেলা সদরের আধিপত্য নিয়ে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং জিয়ারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসাইন সরকার ও তার শ্যালক মহিউদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে সোহেল বাহিনী। মনিরের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন। মনির নিহত হওয়ার পর তার গ্রুপের নেতৃত্ব এবং মামলার তদারকি করতেন জামাল। এরই মাধ্যে মনির হত্যা মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন সন্ত্রাসী সোহেল শিকদার। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা তুলে নিতে জামাল ও মনিরের স্ত্রীকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন সোহেল। রাজি না হওয়ায় জামালকে খুনের পরিকল্পনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে জামালকে হত্যা করা হয়েছে। যাকে বলা হয় টার্গেট কিলিং। ইতঃপূর্বে তিতাস, জিয়ারকান্দি, গৌরীপুর এলাকায় আধিপত্য নিয়ে অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা অতীতের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এজাহারে সোহেল সিকদারের নাম এসেছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারাই থাকুক তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। সূত্র.যুগান্তর।