বিয়ের সাড়ে ৯ মাসের মাথায় লাশ হয়ে বাবার বাড়ি ফিরল গৃহবধূ ইসরাত জাহান রিমা। যৌতুকের জন্য মেয়েকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাবা মন্নান হাওলাদার।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার আগারগাঁও তালতলায় অবস্থিত সংসদ ভবনের কর্মচারী কোয়াটারের এগারোতলায় রিমা(১৯) ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে রিমার আমতলী বাসায় সরেজমিন উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।
স্বজন আর রিমার মা রাজিয়া বেগম বার বার মেয়ের নাম ধরে ডাক চিৎকার দিচ্ছেন আর মুর্ছা যাচ্ছেন।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিবাসী মো. মন্নান হাওলাদারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রিমা বেগমের সঙ্গে কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া গ্রামের মৃত হানিফ মোল্লার ছেলে সাদ্দাম হোসের ২০২২ সালের ১৩ জুলাই বিয়ে হয় (সাড়ে ৯ মাস)।
সাদ্দাম হোসেন জাতীয় সংসদ ভবনের পরিবহন শাখার কম্পিউটার অপারেটরের চাকুরি করেন। বিয়ের সময় ইসরাত জাহান রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার মেয়ের সুখের কথা ভেবে সকল আসবাবপত্র ও প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণ দিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকেই শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও ভগ্নিপতি মাসুদ রানা ওই বাসায় থাকতেন এবং রিমাকে কারণে অকারণে নির্যাতন করতেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে রিমার বাবার বাড়ি থেকে ঢাকায় বাসা করার জন্য টাকা (যৌতুক)এনে দিতে বললে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই দিন বিকেলে রিমাকে ব্যাপক নির্যাতর করেন। নির্যাতনের পর মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পরেন ইসরাত জাহান রিমা। পরের দিন শুক্রবার(৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার সময় রিমা ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে লাশ উদ্ধার করে স্বামী সাদ্দাম মোল্লার পরিবারের লোকজন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হসপাতালে নিয়ে যায়। এবং রিমার বাবাকে এ আত্মহত্যার ঘটনা জানায়।
রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের কপালে কাটা দাগ এবং থুতনি এবং গলায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। আমার মেয়েকে ওরা যৌতুকের জন্য হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে।
রিমার ভাই রাব্বি হাওলাদার বলেন, আমার বোন আত্মহত্যা করে নাই। আমার বোনের অর্ধেক হাটু খাটের উপর আর গলায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না ঝুলছে। এটা কিভাবে আত্মহত্যা হয়।
প্রতিবেশী আলফি আক্তার জানান, রিমা অত্যান্ত হাসি খুশি আর মিষ্টি সভাবের ছিল। এরকম একটি ছোট এবং সুন্দর মেয়েকে নরপশু না হলে মারতে পারে না। অভিযুক্ত স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা স্ত্রীকে হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন, সে নিজে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। তার নিকট কোনো যৌতুক চাওয়া হয়নি। এবং নির্যাতনও করা হয়নি।
ঢাকার শের-ই-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া বলেন, রিমার মরদেহ ময়না তদন্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বিকেলে রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার বাদী হয়ে স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা, শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও তার স্বামী মাসুদ রানাকে আসামি করে একটি হত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছেন।