টাকা তুলতে এখন আর ব্যাংকে যাওয়ার দরকার পড়ে না। এমনকি কিছু কিছু ব্যাংকের বুথে টাকা জমাও দেয়া যায়। প্রায় সবার দোরগোড়ায় প্রতিটি ব্যাংকের বুথ পাওয়া যায় এখন। চাহিদার সাথে মিল রেখে বুথের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। কেতাবি ভাষায় এগুলোকে ডাকা হয় এটিএম বুথ। এটিএম-এর পূর্ণরূপ হলো- অটোমেটেড টেলার মেশিন। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা যেকোন সময় টাকার প্রয়োজনে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সুবিধা পাওয়া যায়। নিজের অ্যাকাউন্ট যে ব্যাংকে, সে ব্যাংক ছাড়াও অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকেও এই টাকা তোলা যায়। কোথাও কোনো কাজে ঘুরতে গেলে, এটিএম কার্ড থাকলে, নগদ টাকা সাথে নিয়ে চলাচল করার প্রয়োজন হয় না।
প্রযুক্তির উন্নতির পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের কুপ্রবৃত্তি। তাই এটিএম কার্ড এবং বুথ ব্যবহারের আগে অবশ্যই সাবধান থাকা উচিত। সেন্ট্রাল ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। যেগুলো মানলে নিরাপদে লেনদেন করা যায়। কী সেই নিয়ম চলুন দেখে নিই।
এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে প্রস্তুতি
যে কার্ডটি ব্যবহার করবেন তার পিন নম্বর আগে থেকেই মনে রাখার পাশাপাশি কার্ডটি হাতে নিয়ে বুথে প্রবেশ করুন। খেয়াল রাখুন যখন পিন নম্বরটি ব্যবহার করছেন তখন আশপাশে অন্য কেউ আছে কি না। নিজে কার্ডের ব্যবহারবিধি না জানলে ভালোভাবে জেনে নিন। অন্য কারও কাছে সাহায্য নেয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে সহজেই আপনার তথ্য অন্য কেউ জেনে যাবে।
শরীরকে ঢাল বানান
বুথে প্রবেশ করার পর যখন কার্ডটি ব্যবহার করবেন তখন শরীর দিয়ে মেশিনটি আড়াল করে রাখুন। যাতে পেছন থেকে কেউ আপনার তথ্যগুলো না দেখতে পায়। কাজ শেষ হয়ে গেলেই বেরিয়ে যাবেন না, মেশিনের স্ক্রিনটি যতক্ষণ না আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বুথেই অবস্থান করুন।
ভুল পিন প্রদান থেকে বিরত থাকুন
কার্ডের পিন প্রদান করছেন, কিন্তু ভুল দেখাচ্ছে? সেক্ষেত্রে দুইবারের বেশি চেষ্টা না করাই শ্রেয়। বারবার ভুল পিন প্রদান করার কারণে এটিএম কার্ড লক হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও লিমিটের চেয়ে অধিকবার ভুল পিন প্রদান করার কারণে কার্ড এটিএম মেশিনের মধ্যে আটকে যেতে পারে, যা বেশ বিড়ম্বনার সৃষ্টি করতে পারে। তাই জরুরি মুহুর্তে টাকা তোলার ক্ষেত্রে যদি পিন সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হয়, তবে বারবার পিন প্রদান করে টাকা তোলার চেষ্টা না করে তৎক্ষনাৎ কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানানো শ্রেয়।
কার্ড নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা
কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার আগে আপনার কার্ড কোন নেটওয়ার্কে রয়েছে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। কার্ডের নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করে আপনি কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন কিনা। যেমন- আপনি যদি ভিসা কার্ড ব্যবহার করে থাকেন, তবে ভিসা নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে এমন বুথে টাকা তুলতে যেতে হবে। অন্যথায় ভিসা নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করেনা এমন বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন না।
একটি কার্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর পিন নাম্বার। কেউ আপনার কার্ডের পিন জেনে গেলে খুব সহজে আপনার কার্ড দিয়ে ফান্ড টান্সফার বা টাকা উইথড্র করতে পারবে। তাই আপনার কার্ডে থাকা অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পিনের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটিএম বুথে কার্ডের পিন এন্টার করার সময় কেউ যাতে আপনার পিন দেখতে না পায়, সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় একই এটিএম বুথে একাধিক মেশিন থাকে, যার ফলে উক্ত স্থানে একাধিক মানুষ উপস্থিত থাকতে পারে। এমন অবস্থায় নিজের কার্ডের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করুন।
সময় জ্ঞান রাখা
এটিএম বুথে কোনো লেনদেনের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা, কার্ড এবং রিসিপ্ট নিয়ে নিতে হবে, তা না হলে বুথের মেশিন সেগুলো আবার টেনে ভিতরে নিতে পারে। তাই এমন বিড়ম্বনার মুহুর্ত এড়িয়ে চলতে টাকা, কার্ড এবং রিসিপ্ট বের হওয়ার পর তা সাথে সাথে নিয়ে নিন।
অনেক সময় আমরা বিভিন্ন ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে অন্যকে নিজের কার্ডের তথ্য প্রদান করে থাকি লেনদেন সম্পাদনের জন্য। কিন্তু এই কাজটি সম্পূর্ণ ভুল। কখনো কার্ডের পুরো নাম্বার, সিভিভি, ওটিপি এবং পিন কারো সাথে শেয়ার করা উচিত নয়। শুধুমাত্র পরিচিত বা অপরিচিত নয়, এমনকি ব্যাংকের কোনো কর্মীর সাথেও এসব তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকুন। ব্যাংকের নাম করে আপনার কার্ডের তথ্য জালিয়াতির খপ্পরে পড়তে না চাইলে সাবধান থাকা একান্ত জরুরি। মনে রাখবেন, ব্যাংক কখনো নিজ থেকে যোগাযোগ করে আপনার কার্ড বা ব্যাংকের ডিটেইলস জানতে চাইবেনা। তাই কার্ড সোয়াইপের জন্য কাউকে দেওয়াই হোক বা ব্যাংক থেকে আসা ফ্রড কলে হোক, কার্ড বা ব্যাংকের ব্যক্তিগত তথ্য কারো সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
লেনদেন রিসিট নিন
টাকা তোলার পর অবশ্যই রিসিট সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ভুল হাতে যাওয়া রোধ হবে। পাশাপাশি কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে।
এটিএম বুথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ম সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এটিএম বুথ ব্যবহার করে টাকা তোলার সময় কোনো সমস্যায় পড়লে কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করুন। সবসময় ব্যাংকের কল সেন্টারের নাম্বার ও কাস্টমার কেয়ারের নাম্বার হাতের কাছে রাখুন। এতে কোনো সমস্যা হলে তৎক্ষণাৎ উক্ত ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হবে।
কিছু জরুরি টিপস্
ব্যস্ত এলাকায় থাকা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলুন।
যখন লোকজনের ভিড় থাকবে, সেই সময়ে এটিএম-এ টাকা তুলবেন।
এটিএম-এ ঢোকার সময় ভালো করে খেয়াল করুন। কোনোভাবে কিছু সন্দেহজনক লাগলে টাকা তোলার কাজ বাতিল করুন।
এটিএম মেশিনে পিন দেয়ার আগে নিশ্চিত হোন, আশপাশে কেউ নেই। পারলে যতটা আড়াল করে পিন নম্বর দেয়া যায় সেটাই করুন।
টাকা ওঠানোর আগে এটিএম মেশিনটি ভালো করে দেখে নিন। অনেক সময় প্রতারকরা কার্ড হোল্ডারের জায়গায় নকল প্যানেল বসিয়ে রাখে। এতে কার্ডের নম্বর সেই প্যানেলে উঠে যায়। অনেক সময় টাকা বের হওয়ার জায়গায় পাতলা কার্ড ঢুকিয়ে রাখা হয়। এতে টাকা তুললেও তা বাইরে আসে না। আপনি বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে গেলে সেই পাতলা পাত সরিয়ে টাকা বের করে নেয় দুষ্কৃতিকারীরা। আবার অনেক সময় প্রতারকরা এটিএম-এর ভেতরে ক্যামেরা রাখে, যাতে আপনার এটিএম পিন নম্বর রেকর্ড করা যায়।
এটিএম-এ কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাহায্য নেবেন না। সাহায্য চাওয়ার আগে বোঝার চেষ্টা করুন লোকটার মতিগতি। আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে আসা লোককে এড়িয়ে চলুন। এটিএম-এ কোনো সাহায্যের দরকার হলে সেখানে থাকা নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্য নিন।
কার্ড এটিএম-এ ফেলে রেখে আসবেন না। এটিএম মেশিনে কার্ড আটকে গেলে হতাশ হয়ে বাইরে বের হবেন না। নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্য নিন অথবা ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার-এ ফোন করে বিষয়টি জানান।
ট্রানজাকশনের পরে রিসিট নিতে ভুলবেন না। যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের ট্রানজাকশন ঠিক হয়েছে বলে মন থেকে নিশ্চিত হতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত রিসিটটি সঙ্গে রাখুন। আমাদের অভ্যাসই আছে, ট্রানজাকশন শেষে রিসিট এটিএম-এর ডাস্টবিনে ফেলে দিই। এটা না করাই বাঞ্ছনীয়।
এটিএমে ঢোকার পরে পারলে দরজা বন্ধ করে দিন। অনেক সময়ে খোলা দরজা দিয়ে সন্তর্পণে এটিএম-এ ঢুকে যায় দুর্বৃত্তরা। আক্রমণ করে বসে গ্রাহককে। এমন বহু ঘটনা ঘটেছে।
টাকা তুলেই এটিএম-এ গুণতে শুরু করবেন না। বরং একটা নিরাপদ স্থানে এসে টাকাটা গুনে নিন। কোনো ভুল থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের কাস্টমার সেকশনে অভিযোগ দায়ের করুন।
আপনার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করে রাখুন। এতে যেকোনো লেনদেনের পর এসএমএস অ্যালার্ট পাওয়া যাবে। ফলে পরবর্তী সময়ে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ধরা পড়বে।