আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দলের জাতীয় সম্মেলন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়ন করছি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ১৫ আগস্টের শহীদ ও মরহুম উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় তাদের সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আমরা সেটা ভুলে যাই না। প্রতিবার বাজেট ঘোষণার সময় সেই ইশতেহার হাতে নিয়ে কতটুকু অর্জন করতে পারলাম, কতটুকু আমাদের সামনে করতে হবে, সেগুলো বিবেচনা করে সেভাবেই বাজেট করি।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করেছি। আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। পদ্মা সেতু একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সততা ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছি। নিজের অর্থে সেই সেতু করেছি। ২৫ জুন উদ্বোধন করবো, ইনশাআল্লাহ। কানাডা কোর্ট রায়ে বলেছে— সব অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা।
পদ্মা সেতু আমাদের সব চেয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক একটি দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থ বন্ধ করে দেয়। এজন্য আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দোষ দেবো না। ঘরের শত্রু বিভীষনই হয়। ড. ইউনূস এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছিল। তার গ্রামীণ ব্যাংকে এমডি পদটার জন্য। সে এমডি পদটি হারিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী বয়সের জন্য। আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারে। সে ৭১ বছর পর্যন্ত এমডি থেকে ছিলো। একটি ব্যাংক এভাবে বিআইনিভাবে চলতে পারে না। এজন্য ইউনূস আমাদের সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও করে। কিন্তু সেই মামলায় সে হেরে যায়। সেজন্য সে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠে এবং হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে অর্থাৎ আমেরিকা সরকারকে দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করে আমাদের পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করে দিতে। সেখানে দুর্নীতির প্রশ্ন যখন তোলা হয়েছিল, আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। এটা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার কোর্ট স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভুয়া। কিন্তু সেই সময় একটা প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন, আমাদের কিছু লোক নানা ধরনের কথা বলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছিলাম, আমরা নিজেদের অর্থে করবো। সেটা করেছি। ইনশাল্লাহ, ২৫ জুন আমরা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবো। আশা করি, সব কিছু ভালোভাবে হবে। এই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম এই কারণে যে, বাংলাদেশের সম্পর্কে কেউ বিরূপ কোনও কথা বললে আমার নিজেরই কষ্ট লাগে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থা দুঃখজনক ছিল। কারণ, ক্ষমতা তো জনগণের হাতে ছিল না। ক্ষমতা চলে গিয়েছিল সেই মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে। উর্দি পরে ক্ষমতা দখল করতো। যার ফলে দেশের উন্নয়ন না হয়ে তারা তাদের উন্নয়ন করেছে। ১৯/২০টা ক্যু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, সেশনজট ছিল।
দলীয় সূত্র বলছে, বৈঠকে আগামী জাতীয় সম্মেলন ও সংসদ নির্বাচন এবং সমসাময়িক নানা ইস্যুতে উপদেষ্টাদের থেকে পরামর্শ নেবেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দল ও সরকার পরিচালনায় নানা বিষয়ে সহযোগিতার জন্য নির্দেশনাও দেবেন তাদের। ইনকিলাব।