ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য নথিপত্র তৈরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ১০ বছর ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের ভুয়া এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে আসছে চক্রটি। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি বেশকিছু রোহিঙ্গা একশ্রেণির অসাধু চক্রের মাধ্যমে ভুয়া এনআইডি কার্ড পায়। এছাড়া কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ভুয়া এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে বিভিন্ন দেশে গমন করতো নানা অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশকিছু পলাতক আসামি গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে দেখেছি তারা নিজেদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য ভিন্ন নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে অন্যত্র বসবাস করছে। আপনারা দেখেছেন সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘাতক পরিবহনের চালকদের গ্রেফতারে দেখেছি তাদের অনেকেই অপরিপক্ব চালক এবং তারা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে পরিবহন চালাচ্ছে।
সম্প্রতি দেখা যায়, কয়েকজন অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্রব্য বেচাকেনার পাশাপাশি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন ধরনের জাল সনদ তৈরি করে আসছে। বর্ণিত বিজ্ঞাপনটি র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেলের নজরে এলে র্যাব ওই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
এ ভিত্তিতেই সোমবার (২১ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, শাহজাহানপুর ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩ এর সদস্যরা। গ্রেফতাররা হলেন প্রতারণা চক্রের মূলহোতা মো. গোলাম মোস্তফা (৬০), মো. জালাল বাশার (৫৪), মো. মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মো. মিনারুল ইসলাম (২২) ও মো. তারেক মৃধা (২১)।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে দুটি কম্পিউটার, ২ হাজার ৪৬০টি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) জাল প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ, ২৬টি ভুয়া এনআইডি, একটি ল্যাপটপ, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি প্লাস্টিকের ভুয়া এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্লাঙ্ক কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, একটি কার্ড প্রিন্টার, চারটি সফটওয়্যারের সিডি, চারটি পেনড্রাইভ, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ হাজার ৮০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।