প্রত্যেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে খেয়ে না খেয়ে বুকে-পিঠে লালন-পালন করে বড় করে থাকেন।তেমনি সন্তানেরাও বড় হয়ে বাবা মায়ের প্রতি যত্ন নেওয়া দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়।মাঝে মধ্যে সন্তানদের অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা বিবেককে নাড়া দিয়ে ওঠে। বড় হয়ে অনেকের সন্তানেরা বাবা-মা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও শুনা যায়। খাবারের আশায় সন্তানের বিরুদ্ধে থানা-আদালত পর্যন্ত যেতে হয় বাবা-মাকে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর নিয়ামতপুরে।
দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আশায় ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ময়েজ উদ্দীন (৮০) নামে এক অসহায় বৃদ্ধ বাবা। তিনি উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নের দিঘীপাড়া (পশ্চিম পাহাড়) গ্রামের বাসিন্দা। বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। সোমবার বিকেলে নিয়ামতপুর থানায় বৃদ্ধ তার ছেলে মুনছের আলী (৩৫) ও পুত্রবধূ সুলতানা বেগমের (৩০) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, বৃদ্ধ ময়েজ উদ্দীনের স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন। তার ছেলে কৃষি কাজ করে সংসার চালান। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিজেই রান্না করে খেতেন। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমানে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। একমাত্র ছেলে ভরণপোষণ দেন না। শুধু বাঁচার তাগিদে নিজেকেই নিজের খাবার রান্না করে খেতে হয়। অনেক সময় রান্না করে খেতে না পেরে অভুক্ত থাকতে হয়।
স্থানীয় তাইজুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, ছেলে মুনছের আলী তার বাবার প্রতি খুবই উদাসীন। কোনো খোঁজখবর রাখেন না। মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাবার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার প্রতিবেশীরা মুনছেরকে বোঝানোর পরও কোনো প্রতিকার হয়নি। অবশেষে নিরূপায় হয়ে ভরণপোষণের দাবিতে ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধ।
ভুক্তভোগী বাবা ময়েজ উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে একাই রান্না করে খান। বয়সের ভারে এখন তেমন কিছুই করতে পারি না। অসুখ-বিসুখ প্রায় লেগেই থাকে। যোগ্য কর্মক্ষম ছেলে থাকার পর ভরণপোষণও বন্ধ করে দিয়েছে। পুত্রবধূর প্রতি কিছুটা ভরসা করলেও সেও ছেলের মতোই আচরণ করে।
তিনি বলেন, যেদিন শরীর খুব খারাপ থাকে রান্না হয় না তার। না খেয়ে থাকতে হয়। পাড়া-প্রতিবেশীরা খোঁজ নিয়ে জানলে কিছু দিলে খেতে পারেন। সব মিলিয়ে অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটছে এখন। শুনেছি সরকার নাকি বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে আইন করেছে। সেই ভরসায় শুধু দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আশায় অভিযোগ করেছি।
বৃদ্ধার ছেলে মুনছের আলী বলেন, বাবার বয়স হয়েছে। সব সময় হয়ত তার চাহিদা পূরণ করতে পারি না। বাবা যে অভিযোগ করেছেন তা ঠিক না। থানার ওসি জানান, অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।