ফলােআপ:
দীর্ঘ ৭ বছরের প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিয়ে করেন এমরান ও উষাদম্পতি। বিয়ের এক বছরের মাথায় দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় টানাপোড়নওে অশান্তি। স্ত্রী উষা ঢাকায় পড়াশুনার সুবাদে জড়িয়ে পড়েন অবৈধ সম্পর্কে ,নানাভাবে চেষ্টা করেও স্ত্রীকে অবৈধ সম্পর্ক থেকে ফেরাতে ব্যর্থ হয় এমরান। স্ত্রী উষা প্রয়োজন ছাড়াই টাকার জন্য চাপ দিত এমরানকে। স্ত্রীর এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে রাগ ক্ষোভে- অভিমানে আত্মহত্যা করে এমরান হোসেন মুন্না (২৯) ।
কুমিল্লা নগরীর বারপাড়া এলাকায় ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় নিজ ঘরে আত্মহত্যা করে এমরান।আত্মহত্যার আগে এমরান নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ত্রীকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এমরানের পিতা মতিউর রহমান বাদী হয়ে ছেলের স্ত্রী সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষার (২৮) বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা সদরের বারপাড়া এলাকার মো.মতিউর রহমানের পুত্র এমরান হোসেন মুন্না। লাকসাম উপজেলার রাজাপুর এলাকার খিলা বাজার গ্রামের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কন্যা সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষা। একসময় কুমিল্লা কর্মাশিয়াল ইন্সটিটিউট (বর্তমানে সরকারি সিটি কলেজ ) এ শিক্ষার্থী ছিল মুন্না ও উষা। দুই জন এক বছরের সিনিয়র-জুনিয়র। কলেজ জীবনে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়ে আট বছর পর ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী দুজনে বিয়ের পিড়িতে বসে। বিয়ের এক বছর পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়ন শুরু হয়। উষা ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুবাদে বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকতো আর মুন্না প্রথমে কুমিল্লায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করলেও পরে চাকুরী ছেড়ে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করে।
মুন্নার বন্ধু ও পরিবার জানায়, উষা ঢাকায় সোহেল নামের এক ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। শুরু করে মুন্নাকে মানসিক নির্যাতন। প্রতি মাসে দুই তিনবার করে টাকা পাঠাতে হত স্ত্রী উষাকে।তার চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে এমরানকে মরে যাওয়া কথা বলে কটাক্ষ করে । এতে মানসিকভাবে মুন্না ভেঙ্গে পড়ে।
স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক ও টাকার জন্য অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারনে ক্ষোভে এমরান ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিয়ে স্ত্রীকে ছবি পাঠায় এবং ম্যাসেজ করে। কিন্তু স্ত্রী উষা এতে কর্নপাত না করে উল্টো উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে। এতে মুন্নামোনসিক যন্ত্রণা ও ক্ষোভে বাধ্য হয়ে নিজ শোয়ার ঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে উড়না পেছিয়ে আত্মহত্যা করে। এ সময় পরিবারের লোকজন শব্দ পেয়ে এমরানের রুমের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও কোন উত্তর না আসায় দরজা ভেঙ্গে এমরানকে ঝুলতে দেখে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহ:পতিবার বাদ যোহর গুধির পুকুরপাড় ঈদগাহ ময়দানে এমরান হোসাইন মুন্নার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আত্মহত্যা করার আগে বন্ধুদের নিকট মুন্নার লিখা মেসেজের একটি অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
“যারা এই মেসেজগুলো পড়বেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতেছি আমার মৃত্যুর জন্য আমার বউ দায়ী, পরকীয়া করে আরেকজনের লগে শুইছে এগুলো ধরতে পারছি বলে আমার উপর গত মাস খানিক অত্যাচার চলছে। মুখ বুঝে সহ্য করছি আজ আর পারলাম না তাই চলে গেলাম। আমাদের সিআইডি বন্ধু ঐ ছেলের সকল তথ্য জানে, আমার তোদের কাছে একটাই চাওয়া তারা আমার জীবনটা শেষ করে দিছে। তাদের একবারে মারবি না আমাকে যেভাবে তিলে তিলে মারছে ঐ ভাবে মারবি।। তোদেরকে এগুলো লজ্জায় বলতে পারিনাই তাই আজ হেরে গেলাম জীবন যুদ্ধে তবে ঊষার শরীরের প্রতিটা পশম যেন শিউরে যায় তার ওপর প্রতিশোধ এটাই। চাওয়া আর কিছু নাই”
এ বিষয় কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) আনওয়ারুল আজিম জানান, খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্বার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পরিবার আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।