একটি হত্যা মামলায় দ্রুততম সময়ে আসামি গ্রেপ্তার ও অভিযোগপত্র দেওয়ায় ঝিনাইদহের পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন জেলার কালীগঞ্জ থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) সাগর সিকদার। সেখান থেকে এক টাকাও খরচ না করে পুরোটাই তিনি তুলে দিয়েছেন খুন হওয়া যুবকের পরিবারের হাতে। পাশাপাশি ওই পরিবারকে উপহারও দিয়েছেন তিনি। এসআই সাগর ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। টাকা ও উপহার নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি হাজির হন নিহত যুবক শাহিন আলমের বাড়িতে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও নিহত যুবকের বাবা চাঁদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে নিহত হওয়ার পর মামলা সূত্রেই এসআই সাগরের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এ পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড ও ব্যবহারে তিনি মুগ্ধ। তাকে (এসআই) নিজের ছেলের জায়গায় স্থান দিয়েছেন। চাঁদ আলী আরও জানান, মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এসআই সাগর কাউকে হয়রানি করেননি। উল্টো সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন তিনি।
লাশ উদ্ধার ও মামলা:
গত ৬ জুন কালীগঞ্জ উপজেলায় কলাবাগান থেকে চাঁদ আলীর ছেলে শাহিন আলমের (৩০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শাহিন বালিয়াডাঙ্গা বাজারে লেদ-গ্রিলের ব্যবসা করতেন।
৫ জুন রাত ১১টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা তাঁকে খুন করে একটি কলাক্ষেতের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। শাহিনের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী তানিয়া খাতুন তাঁদের ১১ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন।
যা বললেন এসআই সাগর সিকদার:
খুনিরা ঘটনার মোড় ঘোরাতে শাহিন আলমকে উলঙ্গ করে ফেলে রেখে গিয়েছিল। তবে টাকার ওপর রক্তের দাগ থেকে মাত্র সাত দিনের মধ্যেই তিনি আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ খুঁজে বের করেন। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। পরে গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি টাকা ছিনতাই করতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তদন্তে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হওয়ায় মঙ্গলবার ওই দুজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাগর আরও জানান, একটি হত্যাকাণ্ডে একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার আশা করেন তাঁরা। তাই তিনি ন্যায়বিচার পেতে ওই পরিবারকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি নিজের দায়িত্ব পালন করে দ্রুততম সময়ে হত্যার কারণ উদ্ধার ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছেন। এতে যেন সাধারণ মানুষ হয়রানি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি।
উপহার নিয়ে এসআই সাগর বলেন, শাহিনের পরিবারটির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়ে তাঁদের সান্ত্বনা দিতে তিনি উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন।