সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নিজস্ব সমীক্ষায় এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে তাদের মধ্যে শীর্ষে আছেন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
জরিপে বলা হয়েছে, ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, শিক্ষার্থীদের ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, শিক্ষক ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, বেসরকারি চাকরিজীবী ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, ব্যবসায়ী ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, সরকারি চাকরিজীবী ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও আইনজীবী শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়েরের পরিমাণ ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বলেও তুলে ধরা হয়।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে চলমান আলোচনা আর বিতর্কের মাঝেই আইনটি পর্যালোচনা করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন আলোচনা করে আইনের অনাকাঙ্ক্ষিত ধারাগুলো সংশোধন করা সম্ভব। মন্ত্রী বলেন, কোনো আইনই সম্পূর্ণ নয়, নয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমনি আছে তেমনি আছে অপ্রয়োগ। আর তাই প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংস্কার করা যেতে পারে। শনিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে মানুষের জন্য জরুরি আইন বলে মন্তব্য করেন ডাক যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য জাকিয়া পারভীন খানম। তিনি বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ কমাতেই সরকার আইনটি পাস করেছেন।
ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধ, দমন আর দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
আইনটিতে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ, মানহানিকর তথ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঘৃণা প্রকাশ, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে দোষী ব্যক্তির ৩ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আর একই ব্যক্তি এসব অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে তার সাজার পরিমাণ বেড়ে হবে ১০ বছরের কারাদণ্ড।
আইনে মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা চালানো কিংবা মদদ দেয়াকে দণ্ডনীয় অপরাধ উল্লেখ করে ১০ বছরের কারাদণ্ড কিংবা এক কোটি টাকা অর্থ জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বার কিংবা বারবার করলে সে ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, অথবা ৩ কোটি টাকা অর্থ জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইনটিতে ছবি বিকৃতি বা অসৎ উদ্দেশ্যে অজ্ঞাতসারে কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ বা বিকৃত করার মতো অপরাধ করলে ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির অপরাধের সাজা করা হয়েছে ৭ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। সেই সঙ্গে কোনো ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য উপাত্ত ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, বা প্রকাশ করে বা কাউকে করতে সাহায্য করে আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য যদি ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ, সংরক্ষণ করা হয় তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তি বলে গণ্য হবে। আর এ জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
এ আইনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ বা বিশ্বের যে কোনো বসে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি এই আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই বিচার করা যাবে। আইনটির পাসের ২১, ২৫, ২৮ ও ৩৫ ধারায় হয়রানি ও অপব্যবহারের আশঙ্কা করে সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছেন গণমাধ্যম কর্মী ও সুশীল সমাজ। যারা এ ৪টি ধারাকে বাক-স্বাধীনতা আর মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করে চাইছেন সংশোধন।