ফরিদপুরের কাশেমাবাদ গ্রামের আলোচিত নবম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আসামিদের আপিল খারিজ ও ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, ড.ফজলুর রহমান ও চঞ্চল কুমার বিশ্বাস। জানা যায়, ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর ফরিদপুরের কাশেমাবাদ গ্রামের এক আত্মীয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন ১৪ ডিসেম্বর ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ১৫ ডিসেম্বর ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় তার ভাই হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বিচার শেষে ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ শামীম মণ্ডল, বাবুল হোসেন, জাহিদুল হাছান ও আকাশ মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এছাড়া ধর্ষণের অপরাধে তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মৌসুমী নামে এক আসামিকে খালাস দেন আদালত।পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন। শুনানি শেষে আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে দিয়ে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করে রায় দেন।
এছাড়াও অন্য একটি মামলায়, ২০১৪ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে একই পরিবারের চারজনকে হত্যার ঘটনায় চার আসামিকে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে আসামিদের আপিল খারিজ ও ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করে রোববার (৩১ জানুয়ারি) বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা ও এ কে এম ফজলুল হক খান ফরিদ। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
চার আসামি হলেন- সুমন ঢালী ওরফে ডাকু সুমন, জাকারিয়া হোসেন জনি, সুমন ওরফে সিএনজি সুমন ও মো. নাসিরউদ্দিন।
আইনজীবীরা জানান, ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমপুর এলাকার ছয়তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে অটোরিকশা চালক সাজু আহমেদ (৩৫), তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২৬), ছেলে ইমরান (৫) ও মেয়ে সানজিদার (৩) হাত-পা চোখ বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় সাজুর ভাই বশিরউদ্দিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, নিহত সাজুসহ আসামিরা একই ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। আসামির মধ্যে সুমন ঢালী ও জনির সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়া ছিল বলে সন্দেহ করতেন সাজু। এছাড়া সুমনের মোটরসাইকেল এবং স্ত্রীর হাতের রুলি চুরি যাওয়ার ঘটনায় সাজুকে সন্দেহ করতেন আসামিরা।
এসব ক্ষোভ থেকে আসামিরা অতিথি সেজে সেদিন সাজুর বাসায় যায় এবং সেখানেই রাত্রিযাপন করে। রাতের কোনো এক সময় আসামিরা ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে সাজু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে।
পরে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে। ২০১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই সালের ৬ জুন অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন। বিচার শেষে ২৬ নভেম্বর রায় দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ । রায়ে এ চার আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন।
পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন। শুনানি শেষে আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে দিয়ে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করে রায় দেন আদালত।
এ জাতীয় আরো খবর..