জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বারে ফোন করে হারিয়ে যাওয়া মাকে সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিলেন রাজীব সেন নামের এক যুবক।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে তিনি জানান, গত ২৯ জানুয়ারি তারিখে গ্রামের বাড়িতে যান তিনি। রাত ৮টা নাগাদ বাড়ির পাশের সড়কে হাঁটতে বের হয়ে একজন বৃদ্ধা মহিলাকে সড়কের পাশে দেখতে পান। উনার বয়স আনুমানিক ৭০।
তিনি লেখেন, প্রথমে দেখে বৃদ্ধাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়েছিল। পরে কথা বলে বুঝতে পারলাম ভারসাম্যহীন নন। গত দু-রাত ধরে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে বসে দিন পার করছেন তিনি। আমার বাড়ি ও প্রতিবেশিরা মিলে উনাকে কয়েকবার কিছু খাবার ও শীত নিবারণের জন্য কাপড় দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। পায়খানা ও প্রশ্রাবের দুর্গন্ধে তার কাছে কেউ যেতে রাজি হচ্ছে না।
উনাকে এভাবে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। প্রতিনিয়ত তার শরীর কাঁপছিল। কিছু খাবার ও শীত নিবারণের জন্য একটি টুপি ও চাদরের ব্যবস্থা করি। এরপর ওই জায়গা থেকে অপেক্ষাকৃত শুষ্ক একটি জায়গায় রেখে রাতের খাবার ও ওষুধ খাইয়ে দেই।
বাড়িতে এসে জরুরি সেবা (৯৯৯) যখন ফোন দেই তখন সময় রাত ১১টা। মুঠোফোনে উনারা ডিটেইলস জানার পর আমার সঙ্গে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার যোগাযোগ করিয়ে দেন। সদর থানার ডিউটি অফিসার আমার সাথে যোগাযোগ করেন। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও যানবাহন স্বল্পতা ও রাস্তার খারাপের কথা চিন্তা করে উনাকে আজকে সকালে আসার কথা বলি।
শনিবার সকালে পুলিশের টিম আসতে বিলম্ব হওয়ায় পুনরায় ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে আবারো ডিটেইলস বলি। তারপর উনারা সরাসরি সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে আমার কথা বলিয়ে দেন। ওসি সাহেব সব ঘটনা শুনে সমাজসেবা কার্যালয়ের সাথে কথা বলে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়ে দেন। আমার কাছ থেকে এড্রেস নিয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন ডিএসবির এস আই লোকমান।
পরে বৃদ্ধা মহিলা নিজের সম্পর্কে কিছুই না বললেও লোকমান ভাইয়ের কাছে উনি নিজের ঠিকানা, স্বামী ও ছেলের নাম বলেন। ভাগ্যক্রমে লোকমান ভাইয়ের কাছে বৃদ্ধার গ্রামের একজন মেম্বারের নাম্বার থাকায় মেম্বারের মাধ্যমে আমরা উনার ছেলেকে খুঁজে পাই। উনার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায় এই বৃদ্ধা একসপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ আছেন। উনার খোঁজে উনার ছেলে আশেপাশের এলাকায় মাইকিং করিয়েছেন। বিশম্ভরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম থেকে সঙ্গে সঙ্গে উনার ছেলে মোটরবাইক ভাড়া করে মায়ের কাছে আসার জন্য রওয়ানা হয়।
এই সময়ের ভিতরে সুনামগঞ্জ সদর থানা পুলিশের আরেকটি চৌকস টিম একজন মহিলা পুলিশসহ এস আই হাবিব ভাইয়ের নেতৃত্বে এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর এই বৃদ্ধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সুনামগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয় এবং কিছু ফরমালিটিস মেইনটেইন করে উনার ছেলের জিম্মায় তুলে দেওয়া হয়।
রাজীব বলেন, একজন বৃদ্ধা অসহায় জননীকে তার সন্তানের কাছে ফেরত পাঠাতে পেরে যতটুকু আত্মতুষ্টি পেয়েছি তার সাথে জরুরী সেবা (৯৯৯) ও প্রতিজন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বশীল আচরণেও মুগ্ধ হয়েছি।