ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা তদন্তের নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পরও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপিতে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ৪০ ধারা অনুসারে মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৬০ ও আরও ১৫ দিনসহ মোট ৭৫ দিন অতিক্রান্ত হলে পরবর্তী তদন্ত অব্যাহত রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু বর্তমান মামলাসহ (সাংবাদিক কাজলের মামলা) বিভিন্ন মামলায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আইনের এ নিয়ম অনুসরণ না করে আইনের নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল হতে কোনো অনুমোদন না নিয়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া, কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হলো।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, (১) তদন্তকারি অফিসার— (ক) কোনো অপরাধ তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্তির তারিখ হইতে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিবেন; (খ) দফা (ক) এর অধীন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থ হইলে তিনি, তাহার নিয়ন্ত্রণকারি অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে, তদন্তের সময়সীমা অতিরিক্ত ১৫ (পনেরো) দিন বৃদ্ধি করিতে পারিবেন; (গ) দফা (খ) এর অধীন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থ হইলে তিনি উহার কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করিবেন, এবং ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে, পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করিবেন। (২) উপ-ধারা (১) এর অধীন তদন্তকারি অফিসার কোনো তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থ হইলে ট্রাইব্যুনাল তদন্তের সময়সীমা, যুক্তিসঙ্গত সময় পর্যন্ত, বৃদ্ধি করিতে পারিবে।
গত ৯ মার্চ রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা হয়। মামলাটি করেছিলেন মাগুরা-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর।
এরপর ১০ ও ১১ মার্চ রাজধানী হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও দু’টি মামলা হয়। মামলা হওয়ার পর ১০ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরপুলের ‘পক্ষকাল’ অফিস থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ হন। নিখোঁজের বিষয়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়ন। পরবর্তীতে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক।ঢাকা থেকে নিখোঁজের ৫৩ দিন পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্ত সাদিপুর থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ফটো সাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিচারিক আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন কাজল। ২৪ নভেম্বর এক মামলায় এবং অপর দুই মামলায় ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান।
এ জাতীয় আরো খবর..