নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ব্যবসায়ী কাজী রফিকুল ইসলাম রনি (৩৮) নিখোঁজের ৫০ দিন পর মুন্সিগঞ্জের একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুসম্পর্কের খালা সুলতানা রুমাসহ (৫০) দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জ সদরের রামপাল শিকদার বাড়িস্থ রুমার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত রফিকুল ইসলাম রনি ফতুল্লার লালপুরের মৃত কাজী জাহের উদ্দিনের ছেলে। তিনি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করতেন।গ্রেফতাররা হলেন- সুলতানা রুমা মুন্সিগঞ্জ সদরের রামপাল শিকদার বাড়ির প্রবাসী জসিম খন্দকারের স্ত্রী ও তার বাসার গৃহপরিচারিকা ফরিদপুর বোয়ালমারির সামাদ মিয়ার মেয়ে আম্বিয়া (৩২)।
এর আগে বুধবার সকালে পুলিশ রুমা ও আম্বিয়াকে ঢাকার বাড্ডা থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে করলে তারা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে, গ্রেফতারকৃতের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে রনির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রনির ভাই জনি জানান, গত ৩ নভেম্বর সকালে তাদের ফতুল্লার লালপুরস্থ বাড়ি থেকে শুটকি নিয়ে একই এলাকায় বসবাসরত খালা শামীমা আক্তার আসমার বাড়িতে যান রনি। তাদের বাড়িতে থাকা অবস্থায় দুপুরে রনির মোবাইলে বার বার ফোন আসায় রনি না খেয়ে ওই দিনই রাত সাড়ে ৯টায় খালার বাসা হতে বের হয়ে যান। তারপর পর থেকে রনি নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে রনির ভাই আমিনুল ইসলাম জনি বাদী হয়ে গত ৬ নভেস্বর ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-৩৬৫) করেন।
তিনি আরও জানান, গত ২৫ নভেম্বর একটি নম্বর থেকে ফোন করে জানায় রনি কক্সবাজারে। তাকে দ্রুত উদ্ধার না করতে পারলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। পুলিশের মাধ্যমে সেই নম্বর ট্র্যাকিং করে জানতে পারে সেই মোবাইল নম্বরটি রুমার। আর রুমা মুন্সিগঞ্জ হতে ফোন করেছে।
ফতুল্লা মডেল ইনচার্জ আসলাম হোসেন জানান, রনি নিখোঁজ হওয়ার পর ফতুল্লা থানায় একটি জিডি করেন তার ভাই জনি। তদন্তে রুমাসহ আম্বিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে রনিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তারা। তাদের দেয়া তথ্য মতে, ফতুল্লা থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মুন্সিগঞ্জ থানা পুলিশ রনির লাশ উদ্ধার করে।
তিনি আরও জানান, রনির সঙ্গে রুমার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। রনি ও রুমা তারা প্রায় সময় এক সঙ্গে রাত কাটাতো। রাত কাটানোর সময় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সেই সময় রনিকে হত্যা করে প্রাচীর কাপড়ে (ওয়াল ক্লথ) মোড়িয়ে রুমার বাড়ির সেপটি ট্যাংকে লাশ গুম করে রাখে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশফাকুজ্জামান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের খালা রুমা জানায়, রনি সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। ৩ নভেম্বর রাতে রনি তার বাসায় রাত্রিযাপন করে। পরদিন সকালে রুমার কামাল নামে এক আত্মীয় বাড়িতে আসলে ধরা পড়ার ভয়ে রনি ঘরের একটি কাঠের সিন্ধুকের ভেতর লুকিয়ে পরে। এ সময় সিন্ধুকটি আকস্মিক বন্ধ হয়ে যায়। আগত আত্মীয় চলে গেলে রুমা সিন্ধুকটি খুলে দেখে শ্বাসরোধ হয়ে রনি মৃত্যুবরণ করেছে। পরদিন ভোর রাতে রুমা ও কাজের মেয়ে আম্বিয়ার সহযোগিতায় নিহতের লাশ বাড়ির পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়েছিল ।