গত ৯ নভেম্বর ২০২০ এ বোন ও ভগ্নিপতির সাথে চিকিৎসার জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম। দ্বিতীয় তলায় একজন ডাক্তারকে পান তার ভগ্নিপতি। তার পরামর্শে বহির্বিভাগ থেকে টিকিট কাটেন আনিসুলের ভগ্নিপতি। ডাক্তার আনিসুলকে না দেখেই ২টি ইনজেকশন লিখে দেন। আনিসুলকে একটি বেডে শুইয়ে ২ টি ইনজেকশন দেওয়া হয়। ঘুমিয়ে পড়েন আনিসুল।
আনিসুলের বোন ও ভগ্নিপতি তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভর্তি করানোর চেষ্টা করলে কয়েকজন স্টাফ ও দালাল তাদেরকে বোঝান যে, ‘এখানে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। ডাক্তাররা নিয়মিত বসেন না। চিকিৎসা সরণজাম নেই। আপনারা রেজিস্ট্রার স্যারের সঙ্গে দেখা করুন। রোগী সর্বোত্তম চিকিৎসা কোথায় পাবে এ বিষয়ে তিনি সাহায্য করতে পারবেন’।
আনিসুলের বোন ও ভগ্নিপতি রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে দেখা করলে তিনি আনিসুলকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে আদাবরের Mind Aid হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তিনি Mind Aid হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেন। আনিসুলকে সেখানে ভর্তি করালে তিনি যত্ন সহকারে তার চিকিৎসা করতে পারবেন বলে আশ্বাস দিলে আনিসুলের বোন ও ভগ্নিপতির ‘হ্যা-সূচক’ সম্মতি পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন Mind Aid হাসপাতালের ম্যানেজার আরিফকে ফোন করে আনিসুলকে ভর্তির করাতে বলেন।
মূলত, Mind Aid হাসপাতালে পাঠানো প্রত্যেক রোগীর মোট বিলের ২৫-৩০% কমিশন পেতেন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। যে কারনে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা রোগী ও রোগীর অভিবাকদের নির্দিষ্ট কিছু স্টাফ ও দালালদের মাধ্যমে মিসগাইড করে কমিশনের লোভে সুচিকিৎসার নামে Mind Aid হাসপাতালে পাঠাতেন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন।
সকাল এগারোটার দিকে আনিসুলকে নিয়ে তার বোন ও ভগ্নিপতি Mind Aid হাসপাতালে যান। বোন ও ভগ্নিপতি যখন তার ভর্তির ফর্ম ফিলআপে ব্যস্ত, এসময় আনিসুল বারবার ওয়াশরুমে যাওয়ার তাগাদা দিলে ম্যানেজার আরিফসহ হাসপাতালের স্টাফরা তাকে উপরে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
আনিসুলের নিথর দেহ নেড়ে দেখে মৃত্যু নিশ্চিত হয়েই ম্যানেজার আরিফ ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনকে ফোন করে। এ ব্যাপারে ম্যানেজার আরিফের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয় ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের। জিজ্ঞাসাবাদে ম্যানেজার আরিফ জানিয়েছে , ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনকে সে মোবাইল ফোনে জানায় এএসপি আনিসুল মারা গেছে। তবে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন তাকে জানায় আনিসুল যে মারা গেছে, এ বিষয়টি যেন কেউ জানতে বা বুঝতে না পারে।
আনিসুলের মৃতদেহ অন্য কোন হাসপাতালে নেওয়ার জন্য দ্রুত অ্যামবুলেন্সে উঠানোর নির্দেশ দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন নিজেই Mind Aid হাসপাতালে হাজির হয়ে হন। অ্যাম্বুলেন্সে আনিসুলের মৃতদেহ নিয়ে যান হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত Mind Aid হাসপাতালটির বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। Mind Aid হাসপাতালের পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন সেখানে নিয়মিত রোগী দেখার পাশাপাশি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা রোগীদের সুচিকিৎসার নামে কমিশনের লোভে Mind Aid হাসপাতালে পাঠাতেন।
এ জাতীয় আরো খবর..