মুজিববর্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক এবং কর্মজীবন ও দর্শনের উপর ঘোষণার জন্য সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা নিজেই। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় তিনি এ প্রস্তাব আনবেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবনের ওপর ভাষণ দেবেন সংসদে। জাতীয় সংসদের সোমবারের দিনের কার্যসূচি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেওয়ার পর অধিবেশন কিছুক্ষণের জন্য বিরতি দেওয়া হবে। বিরতির পর অধিবেশনের কাজ বৈঠক শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাধারণ প্রস্তাব তুলবেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নেতা শেখ হাসিনা নোটিশ আকারে তার প্রস্তাব উত্থাপনের পর এর উপর বিশেষ আলোচনা শুরু হবে। সংসদ সদস্যরা টানা চারদিন আলোচনা করবেন এবং বৃহস্পতিবার এ প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে। অবশ্য কর্মময় জীবনের পর চারদিন আলোচনা হওয়ার কথা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের প্রথম দিন রবিবার সংসদকে জানিয়েছেন।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণ আলোচনার জন্য খোদ সংসদ নেতার প্রস্তাব তোলার নজির নিকট অতীতে নেই। সাধারণত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ বা সংসদের সিনিয়র কোন নেতা সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করে থাকেন। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় এনে তারই কন্যা শেখ হাসিনা এবার প্রস্তাব তুলছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সোমবার ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাবে যে বিষয়টি তুলে ধরবেন তা হল- সংসদের অভিমত এই যে, ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি, বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রস্তাবে আরও উল্লেখ হবে, বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করেননি। ১৯৫৭-৪৮ থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন- দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার নিরস্ত্র জনগণ ঘরে ঘরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলেছিল। ২৬ মার্চ ১৯৭১ এর প্রথম প্রহরে জাতির পিতা শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ মহান শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান লাভ করে। বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। লাল-সবুজের পতাকা ও সংবিধান। বঙ্গবন্ধু বিশ্বসভায় বাঙালিকে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্বিত জাতিরূপে মাথা উঁচু করে চলার ক্ষেত্র রচনা করেছেন। স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময় কালে বাংলাদেশের উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন তিনি। ২০২০ সালে জন্মশত বার্ষিকীতে মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক এবং কর্মজীবন ও দর্শনের উপর জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হউক।সুত্র:সময় নিউজ