গাজীপুরে চাঞ্চল্যকর পুলিশের সোর্স সাগর হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- প্রধান আসামি মো. লিটন (২৩), মো. শাহীন (২২), মো. শরীফুল ইসলাম (৩৮) ও মো. আরমান (১৯)। তাদের বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার বাহাদুরপুর ও ভাওরাইদ এলাকায়।র্যাব-১ এর গাজীপুরের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে জানান, গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় নগরীর বাহাদুরপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জ থানার চরানীখলা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. সাগর মিয়া (১৮) নিখোঁজ হন।
পরে ১৯ অক্টোবর দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ন্যাশনাল পার্কের নান্দুয়াইন চাতুরাপাড়া এলাকায় নাফিজ গার্ডেনের পাশে ধানক্ষেতের ভেতর থেকে অজ্ঞাত যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে র্যাব এবং পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে গত ৩ নভেম্বর নিখোঁজের সন্ধানে র্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়।
পরবর্তীতে গত ৫ নভেম্বর নিখোঁজ সাগরের পরিবারের লোকজন র্যাব ক্যাম্পে এসে পোশাক, বেল্ট, স্যান্ডেলের ছবি দেখে সাগরের মরদেহ শনাক্ত করে। পরে র্যাব প্রযুক্তি ব্যবহার করে চার আসামিকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে সাগর হত্যায় জড়িত থাকার কথা তারা স্বীকার করেছেন।
গ্রেফতার আসামিদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, আসামিরা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী। তারা পূর্বে বিভিন্ন মামলায় আটক ছিল। কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় তারা কারাগারে আলোচনা করে তাদের আটকের পেছনে পুলিশের সোর্স সাগরের ভূমিকা রয়েছে। জেলে বসে তারা পরিকল্পনা করে কারাগার থেকে বের হয়ে তাদের পথের কাঁটা সাগরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে।
১৬ অক্টোবর ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতার আসামিদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গাজীপুর মহানগরীর ভীমবাজার এলাকায় ভিকটিম সাগরসহ তারা এক সঙ্গে চোলাই মদ পান করেন। আসামি মো. শরীফুল এবং পলাতক আসামি আমিরুলের পরিকল্পনা মতে ওইদিন রাত আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে আসামিরা ভিকটিম সাগরকে ইয়াবা দেয়ার কথা বলে সন্ত্রাসী লিটন এবং শাহীনের সঙ্গে ন্যাশনাল পার্কের গহীন বনের মধ্যে নিয়ে যায়।
আসামি শরীফুল ও আরমান রাস্তায় পাহারার দায়িত্বে থাকে এবং পলাতক আসামি আমিরুল আগে থেকেই বনের মধ্যে চাকু এবং লাঠি নিয়ে অবস্থান করেছিলেন। সন্ত্রাসী লিটন এবং শাহীন ভিকটিম সাগরকে নিয়ে বনের ভেতর পৌঁছালে তিনজন মিলে প্রথমে তাকে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করেন এবং পলাতক আসামি আমিরুলের সঙ্গে থাকা গামছা দিয়ে সাগরের গলা গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। শাহীন দুই পা, লিটন দুই হাত চেপে ধরেন এবং আমিরুল তার সঙ্গে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে সাগরের গলা কেটে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করেন।
সাগরের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরে হত্যাকারীরা মরদেহ কাঁধে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার দূরে গাজীপুর মহানগরীর ন্যাশনাল পার্কের নান্দুয়াইন চাতুরাপাড়া এলাকার নাফিজ গার্ডেনের পশ্চিম পাশের দেওয়াল সংলগ্ন খায়রুল মিয়ার ধানক্ষেতের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহের মুখ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। পরবর্তীতে হত্যাকারীরা রক্তাক্ত শরীর পরিষ্কার করে মোটরসাইকেলে করে পলাতক আসামি আমিরুলের বাসায় দাওয়াত খেয়ে রাতে যার যার বাসায় চলে যান। আটক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন তারা। পলাতক আসামি আমিরুলকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।