ঘরে অবৈধভাবে মদ-ওয়াকিটকি রাখায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ঢাকা ৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের ছেলে, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইরফান সেলিম ও দেহরক্ষী মো. জাহিদসহ কেরানীগঞ্জস্থ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার (২৬ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মামুন।
তিনি জানান, কারাগারে প্রবেশের পরপরই ইরফানসহ দেহরক্ষীকে শরীর তল্লাশির পর নিয়ম অনুযায়ী কারাগারে করোনাভাইরাস সতর্কতার জন্য ভেতরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।এর আগে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার বডিগার্ড মো. জাহিদকে এক বছর করে জেল দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাস ও বিদেশি মাদক রাখার দায়ে ছয় মাস করে মোট এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে দু’জনকে।গতকাল দুপুরে ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানে ৩৮টি ওয়াকিটকি, পাঁচটি ভিপিএস সেট, অস্ত্রসহ একটি পিস্তল, একটি একনলা বন্দুক, একটি ব্রিফকেস, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি ড্রোন এবং সাত বোতল বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করা হয়। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান সেলিম জানিয়েছেন, এসব ওয়াকিটকির মাধ্যমে তিনি তার বাসার আশপাশের পাঁচ থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা নেতাকর্মী ও অনুসারীদের সঙ্গে কথাবার্তা এবং যোগাযোগ রাখতেন।র্যাব জানিয়েছে, উদ্ধার ভিপিএস সেটগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডিটেক করতে পারত না। তার বাসার চার ও পাঁচতলার কন্ট্রোল রুম থেকে এসব উদ্ধার করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, এসব অস্ত্র ও হ্যান্ডকাফের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ইরফান সেলিম। আমাদের ধারণা এগুলো দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতেন। তার অস্ত্র দুটির কোনো লাইসেন্স ছিল না।
১৪ তলায় টর্চার সেলের সন্ধান পায় র্যাব:
এছাড়াও রাজধানীর চকবাজারের হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মদীনা আশিক টাওয়ারের ১৪ তলায় টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর রাতেই মদীনা আশিক টাওয়ারে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের নিজস্ব টর্চার সেলে অভিযান চালানো হয়।ইরফানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর ইরফানের বাড়ির কাছাকাছি জায়গা মদীনা আশিক টাওয়ারের ১৪ তলার একটি রুমে অভিযান চালায় র্যাব।লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, টর্চার সেলটি ইরফান সেলিমের। সেখানে নির্যাতন করার সবধরনের উপকরণ জব্দ করা হয়েছে।অভিযানে ওই রুম থেকে দড়ি, হাতুড়ি, রড, মানুষের হাড়, গামছা, নেটওয়ার্কিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ওয়াকিটকিসহ টর্চারের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
এর আগে রোববার (২৫ অক্টোবর) রাতে এমপি হাজী মো. সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। রাজধানীর কলাবাগান সিগন্যালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। রাতে এ ঘটনায় জিডি হলেও আজ (সোমবার) ভোরে হাজী সেলিমের ছেলেসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।