ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষার্থী। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘ধর্ষক এবং ধর্ষণে সহায়তাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে আমি জীবন দেব কিন্তু অনশন ভাঙব না।আজ শনিবার বিকেলে ঢাবির টিএসসির সামনে রাজু ভাস্কর্যে অনশনস্থলে ওই ছাত্রী এনটিভি অনলাইনকে এ কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিনি অনশন শুরু করেছেন। ছাত্রলীগের অন্তত ২০ নেতাকর্মী ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সেখানে অবস্থান করছেন।
এছাড়াও ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নেতাকর্মীও এর সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন। আজ বিকেলে ওই শিক্ষার্থীর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ক্যাম্পাসে পদযাত্রা ও সমাবেশ করে। সংগঠনটির পক্ষ থেকেও নুরদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী বলেন, ‘এখন কেউ ধর্ষণের শিকার হলেই অপরাধী গ্রেপ্তার হচ্ছে। কেউ ছাড় পাচ্ছে না। ভিপি নুরসহ মামুনদের কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করছে না? আমি কি তাহলে বিচার পাব না? আমি কি বাংলাদেশের নাগরিক না?’
‘এখানে অনশনে বসে আমার শরীর ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। আমি ঠিকমতো বসতেও পারছি না। কয়েকবার বমি করেছি। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখানে চিকিৎসক এসেছিলেন। তিনি আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে স্যালাইন দিয়ে গেছেন। আমি মারা যাব কিন্তু হাসান আল মামুন ও নুরুল হক নুরসহ ছয় আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এখানে অবস্থান করব। আমি ধর্ষকদের শাস্তি চাই।’
শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘আমি এখানে অনশনে বসেছি আজ তিনদিন। এখনো পর্যন্ত আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও আমার কাছে কেউ আসেনি।’
ধর্ষণ ও ধর্ষণে অভিযোগ এনে ওই ছাত্রী গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ থানায় নুরুল হক নুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরের দিন সোমবার পরষ্পর যোগসাজশে অপহরণ করে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহায়তা এবং হেয়প্রতিপন্ন করে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার করার অভিযোগ একই ব্যক্তিদের আসামি করে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় আরেকটি মামলা করেন ওই ছাত্রী।
মামলা দুটির এজাহারে ওই ছাত্রী বলেন, ‘ধর্ষণের পর হাসান আল মামুনের সঙ্গে বিষয়টি সুরহা করতে না পেরে শেষমেশ গত ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নুরকে মৌখিকভাবে জানাই। সে বলে, মামুন আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সঙ্গে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেব। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তার ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়।’
পরে ২৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুক লাইভে এসে নুরুল হক নুর বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে কিংবা নীলক্ষেত এলাকায় সিসি টিভির ফুটেজ রয়েছে। পাশে নিউমার্কেট থানা রয়েছে। তো, এই একটা তথ্য যদি প্রমাণ করতে পারেন, আমি নীলক্ষেতে ২৪ জুন ওই মেয়ের সঙ্গে দেখা করেছি বা বিষয়টি মীমাংসার ব্যাপারে কথা বলেছি, তাহলে আমি সমস্ত অভিযোগ মাথা পেতে নেব। রাজনীতি থেকে আমি সরে দাঁড়াব। এবং নিজেকে অপরাধী বলেই মনে করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ঢাবি ছাত্রী আজ বলেন, ‘ভিপি নুর একেক সময় একেক কথা বলেন। সে মিথ্যা কথা বলছে। সে আমার সঙ্গে নীলক্ষেত দেখা করেছে তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। ওই প্রমাণ আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের দিয়েছি। আদালতে দেওয়া হবে। আদালত সব দেখবেন। আমি আশা করতে চাই, আমি সঠিক বিচার পাব। এটা আমার অধিকার।’
লালবাগ থানায় করা মামলার আসামিরা হলেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন (২৮), যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ (২৮), ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর (২৫), ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম (২৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) ও আব্দুল্লাহিল বাকি (২৩)। কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় নাজমুল হাসান সোহাগকে ১ নম্বর ও হাসান আল মামুনকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। দুটি মামলায় নুরকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়।