চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অস্থির হয়ে উঠেছে আদার দাম। গত একমাস ধরে পণ্যটির দাম বাড়ছেই। দেশীয় আদা সংকট ও আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
সোমবার (২৯ মে) বাজারটিতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এতে ব্যবসায়ীরা ১৮০ টাকায় আদা বিক্রির অঙ্গীকার করলেও তা রাখেননি। মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে কেজি প্রতি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত। যা খুচরায় ২৫০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে মিয়ানমার থেকে আসা আদাই বেশি। তবে নেই চীনের আদা। পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরায় দাম ৫০-৬০ টাকার পার্থক্য রয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে মিয়ানমারের আদাই বেশি। দেশটি থেকে পণ্যটি আসে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে। যদিও আগের তুলনায় আমদানি অনেক কমেছে। এদিকে, অন্যান্য দেশ কিছু পরিমাণ এলেও দেড় মাস ধরে চীন থেকে পণ্যটি আমদানি একদমই বন্ধ রয়েছে। টেকনাফ বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতি টন আদা আমদানিতে খরচ পড়ছে ৯০০ ডলার (প্রায় ৯৭ হাজার টাকা, কেজি ৯৭ টাকা)। সঙ্গে শুল্ক ও বন্দর খরচসহ প্রতি কেজিতে আরও যোগ হয় ১৫ টাকা। সবমিলিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা আদা বন্দর থেকে খালাস পর্যন্ত দাম পড়ছে ১১২ টাকা। আর চট্টগ্রামের বাজারে ঢুকেই সেই আদার কেজি ২২০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ওই বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে আমদানি কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এ স্থল বন্দর দিয়ে প্রতি টন আদা ৯০০ ডলারে আমদানি করা হচ্ছে।’
একই বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আদা আমদানিকারক মো. ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে আদা আমদানি কমেছে। আগে যেখানে দৈনিক তিন থেকে পাঁচ হাজার টন আমদানি করা হতো বর্তমানে ১০০ টনে নেমেছে। প্রতি টন আমদানিতে খরচ পড়ছে ৯০০ ডলার। ১১ টাকা করে শুল্ক ও চার টাকা করে বন্দর খরচ দিতে হয়। ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় আদা বিক্রি করে থাকি। সেটি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছতে ১৫ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক ভাড়া ২৬ হাজার টাকা এবং সঙ্গে থাকা শ্রমিক খরচসহ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ কেজি প্রতি দুই টাকা খরচ পড়ে।’
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদা ১৮০ থেকে ২০০, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চীন থেকে আমদানি করা আদা বর্তমানে বাজারে নেই। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি থেকে পণ্যটি আমদানি হচ্ছে না।’
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমবার ভোক্তা অধিদফতর ১৮০ টাকায় আদা বিক্রির দাম বেঁধে দিয়েছিল। এখানে আড়তদাররা কমিশনের ভিত্তিতে কেজি প্রতি দুই-চার টাকা লাভ করে পণ্য বিক্রি। কিন্তু আমদানিকারকদের কথা শুনে আজও খাতুনগঞ্জে মিয়ানমারের আদা মান ভেদে ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আড়তদাররা আমদানিকারকের কাছ থেকে কিনে বিক্রি করলেও তারা কত টাকায় এ আদা কিনেছে তার কোনও কাগজপত্র আমাদের দেয় না। যার কারণে আমদানি কত টাকায় হয় তা আমাদের জানা থাকে না। বিশেষ করে কেনার ওপর নির্ভর করেই আমরা বিক্রি করি।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে সর্বশেষ পণ্যটি এসেছিল হয় চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল। সে দিন দুই কনটেইনারে ৫৪ টন আদা এসেছিল।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গরিনোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক নাছির উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে আদা আমদানি হয়েছে পাঁচ হাজার ১৫০ টন। এর আগের বছর একই সময়ে আমদানি হয় ১২ হাজার ৬৬৪ টন। গত বছরের তুলনায় একই সময় পণ্যটি আমদানি প্রায় অর্ধেকের বেশি কমেছে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমবার খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে আদার দাম নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করা হয়। অভিযানে মূল্য তালিকা যথাযথ না পাওয়ায় মেসার্স মিতালী ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই স্থানে মেসার্স আল নুর করপোরেশন মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদা মূল্য তালিকায় ২২৫ টাকা লিখে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি ভাউচার দেখাতে পারেনি। বেশি দাম নির্ধারণ করে বাজার অস্থির করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। তবে পরে বেশি দামে বিক্রি করবে না বলে অঙ্গীকার করলে খুলে দেওয়া হয়।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা করে মিয়ানমারের আদা তাদের কেনা পড়ছে বলে আড়তদাররা জানিয়েছেন। তারা অনেক বেশি লাভে ২২০ টাকায় বিক্রি করেছে। আমরা ১৮০-তে বিক্রির জন্য বলেছি। সুত্র:বিট্রি