দীর্ঘ সময় পর আবারও আলোচনায় আসে ক্রিস্টাল মেথ আইস নামক মাদককে নিয়ে । এই মাদক ঠেকানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
২০১৯ সালের ১৫ জুলাই রাজধানীর কাফরুল থানায় একটা মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় ৪৬টি স্ট্রিকসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দফায় দফায় এসব মাদকের বড় বড় চালানসহ আটক হচ্ছে মাদক কারবারিরা। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি নতুন করে নানাভাবে এ মাদকটি বাংলাদেশ ঢুকছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, যেকোনও মাদক ঠেকানোই একটি চ্যালেঞ্জ। ভয়াবহ আইস মাদকটি নতুনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্রিস্টাল মেথ আইস মাদককে ঠেকাতেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে তারা।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুটি সংস্থা র্যাব এবং বিজিবি পরপর তিনটি বড় চালান জব্দ করে। শনিবার (৬ মে) রাতে ব্যয়বহুল ও ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথের (আইস) সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় চারজনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে আলাউদ্দিন নামে চাকরিচ্যুত এক পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এর আগেও তিনি মাদক নেওয়ার কারণে পুলিশ বাহিনী থেকে বরখাস্ত হন বলে জানায় র্যাব।
শনিবার (৬ মে) কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী এলাকা থেকে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আইসের চালান জব্দ করে র্যাব। জব্দ করা আইসের ওজন ২৪ কেজি। এর আনুমানিক মূল্য ১২০ কোটি টাকা, যা এযাবৎকালে জব্দ করা আইসের সর্ববৃহৎ চালান বলে জানায় র্যাব।
এ বিষয়ে রবিবার (৭ মে) দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,গোপন সংবাদে উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের শফিউল্লাহ কাটা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় আইস মাদকসহ চার জনকে আটক করা হয়। চালানটি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আটক আলাউদ্দিনকে মাদক পরিবহনের অভিযোগে ২০১৭ সালে পুলিশ বিভাগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে চারটির বেশি মামলা রয়েছে। জয়নাল আবেদীন ওরফে কালা বদা পাঁচবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে। তার বিরুদ্ধে ছয়টির বেশি মামলা রয়েছে।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল কক্সবাজারের পালংখালী সীমান্ত থেকে ২১ কেজি ৯০ গ্রাম আইসের চালানসহ তিন মাদক কারবারিকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সময় মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিন জনকে আটক করা হয়।
তার আগে গত বছরের ২২ মার্চ আইসের আরেকটি বড় চালান জব্দ করেছিল র্যাব। তখন মুন্সিগঞ্জ জেলায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১২ কেজি আইসের একটি চালান জব্দ করে সংস্থাটি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এ সময় বিপুল পরিমাণ অন্যান্য মাদক, বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও আইস চালানের সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে র্যাব-১৫ অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, নতুন মাদকটির পেছনে একটি পাইপলাইন কাজ করছে। এর আগে বিজিবি একটি চালানসহ আটক করেছে। এবার র্যাব করেছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সবাই পরস্পর আত্মীয়স্বজন। আমরা যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছি, তারা সবাই ওই এলাকার মাদকের গডফাদার। ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সহজে বহন করা যায়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাচার করে দিতে পারলেই বড় অঙ্কের অর্থের সুবিধা পাচ্ছে তারা। এ জন্য দ্রুত লাভজনক হওয়ার জন্য অনেকে নতুন মাদকের পেছনে ছুটছেন।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, যেকোনও মাদক ঠেকানোই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। আইস মাদকটি নতুনভাবে ছড়াচ্ছে। ক্রিস্টাল মেথ বা আইস ঠেকাতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করছেন। আমরা সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। সব মাদকের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কারা গ্রহণ করে এই মাদক
সাধারণত উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীরাই এ মাদক সেবন করে থাকেন। মাদকটি সেবনে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, একটি সেবনকারীকে সাময়িক আনন্দ দেয়, অন্যটি হ্যালুসিনেশন ও ইলুনেশন দুটোই তৈরি হয়। আর হ্যালুসিনেশনটা যখন দীর্ঘায়িত হয় তখন সৃষ্টি হয় বড় সমস্যা। এমনকি ব্যক্তি পাগল পর্যন্ত হয়ে যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, মাদকটি অতিমাত্রায় গ্রহণে অনেক সুইসাইড পর্যন্ত করে বসে। এটি গ্রহণের ফলে ব্যক্তির চোখের সামনে অনেক কিছু ভাসবে। তবে সেটির বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। যেমন সে ঘরে বসে দেখছে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে কিংবা উড়ে যাচ্ছে। যেটি সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।