বিভিন্ন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আইনি ধারায় না ফেলে, তাদের এক ধরনের চ্যারিটি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নতুন শ্রম আইনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান থাকা সত্ত্বেও কাজের অধিকার, সমিতির অধিকার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা, হয়রানি প্রতিরোধসহ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১০ বার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ক্রেতাদের (আরএমজি) সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করারও আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। বিবৃতিতে বলা হয়, নৈতিক সোর্সিং টেকসইয়ের চাবিকাঠি। শ্রমিকদের অধিকার-সংবেদনশীল শাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ক্রমাগত ব্যর্থতা শিল্পের টেকসইয়ের সবচেয়ে ভয়ংকর চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া রানা প্লাজা ধসের ঘটনা স্মরণ করে টিআইবি বলেছে, রানা প্লাজা ধসের ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক শিল্প বিপর্যয় ঘটে। যে ঘটনায় এক হাজার ১০০ জনেরও বেশি শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে। আড়াই হাজারের বেশি শ্রমিক আহত হয়েছেন। এই ট্র্যাজেডি দরিদ্র এবং অসম্মতিমূলক কাঠামোগত এবং কাজের অবস্থা, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা মান, শ্রম অধিকার অস্বীকার, ঘাটতি, শ্রম আইন ও প্রবিধানগুলোর লঙ্ঘন। দেশে তৈরি পোশাক শিল্পে পরিবেশগত টেকসইয়ের মানসহ অন্যান্য প্রশাসনের ঘাটতিগুলোর একটি পরিসীমা উন্মোচিত করেছে এ ঘটনা। এই বিধ্বংসী ঘটনার পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডাররা বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে শাসন ও নিরাপত্তার মান উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য হাত মিলিয়েছে।
তবে গত ১০ বছরে এই শিল্পে উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে কাঠামোগত এবং অগ্নি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। এখন বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি গ্রিন সবুজ শিল্প ইউনিটের অর্ধেকই বাংলাদেশে। যে সবুজ কারখানা চালু রয়েছে, এরমধ্যে চারটি বাদে সবই গার্মেন্টস সেক্টরের কারখানা। কিন্তু এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গত ১০ বছরে কার্যত কিছুই হয়নি।
কোভিড-১৯ এর পর থেকে অযৌক্তিক মূল্য হ্রাস, ডেলিভারি বিলম্ব, পেমেন্ট আটকে রাখা, বুকিং বাতিল করা এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অন্যান্য অপ্রত্যাশিত আচরণ যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এনওয়াইইউ সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের করা সাম্প্রতিক গবেষণার উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, ব্র্যান্ড এবং বায়িং হাউস দ্বারা ব্যবহৃত এ ধরনের শোষণমূলক সরঞ্জামগুলো উৎপাদকদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার দিকে পরিচালিত করে। এই ধরনের অভ্যাসের চূড়ান্ত বোঝা শ্রমিকদের ওপর গিয়ে পড়ে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিবেচনার বিষয়টি দীর্ঘদিনের দাবি হলেও এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি। তদুপরি বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি এই অঞ্চলের অন্যান্য গার্মেন্ট রফতানিকারক দেশগুলোর তুলনায় কম। যার জন্য ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা সংস্থাগুলোর শোষণমূলক অনুশীলন দায় এড়াতে পারে না। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের এ ধরনের চর্চা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
টিআইবি সরকারকে শ্রম আইনের সংস্কার, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের রাস্তায় বাধা প্রয়োগ না করতেও আহ্বান জানিয়েছে। বিট্রি