পিরোজপুরের নাজিরপুরে দ্বাদশ শ্রেণির এক কলেজছাত্রী ও দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে দিনভর আটক রেখে বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও ধারণ, মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের চিৎকারে ছুটে এসে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলেও স্থানীয় এক প্রভাবশালী তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধা দেয়। বিষয়টি মীমাংসার নামে ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের হাসপাতাল থেকে জোর করে তার বাসায় নিয়ে যায় ওই প্রভাবশালী। তবে এ সংবাদ পেয়ে নাজিরপুর থানা পুলিশ আহতদের ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনির নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কলেজছাত্রী জানান, বুধবার সকালে ওই ছাত্রী নাজিরপুর উপজেলা সদরে প্রাইভেট পড়া শেষে তার প্রতিবেশী ছোটভাই দশম শ্রেণির ছাত্রটিকে সাথে নিয়ে উপজেলার শাখারীকাঠী ইউনিয়নের হোগলাবুনিয়া গ্রামে দাদার বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সকাল ৯টার দিকে তারা ওই ইউনিয়নের গোপেরখাল এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় মনির, অভিজিৎ, শফিক মল্লিক ও শুভ তাদের পথরোধ করে। তাদের জোর করে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের দুজনের মধ্যে কী সম্পর্ক জানতে চায়। তখন ওই ছাত্রী ছেলেটিকে তার প্রতিবেশী ছোটভাই বলে জানালে তারা উভয়কে মারধর করে এবং জোর করে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক আছে এ কথা বলানোর চেষ্টা করে। তাতে রাজি না হওয়ায় তাদের দুজনকেই মারধর করে।
এক পর্যায়ে জোর করে ওই দুই ছাত্র-ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে। ওই বখাটেরা তাদের দু’জনকে দিনভর সেখানে আটক রাখার পর তাদের অভিভাবকদের ফোন করে এক লাখ টাকা চাঁদা আনার প্রস্তাব দেয়। এতে ওই কলেজছাত্রী ও তার প্রতিবেশী ছোটভাই রাজি না হওয়ায় তাদেরকে আবারও মারধর করে। এ সময় স্থানীয়রা চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সন্ধ্যার দিকে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক তাদের ভর্তির উদ্যোগ নিলে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট স্থানীয় এক প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের রক্ষার উদ্দেশ্যে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধা দেয় এবং জোর করে দুই ছাত্র-ছাত্রীকে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে বিষয়টি মীমাংসার নামে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সংবাদ পেয়ে নাজিরপুর থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। আহত ওই ছাত্র-ছাত্রী নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত বর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম মুনির রাত ১০টার দিকে জানান, এ ঘটনায় জড়িত মূল আসামি মনিরকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন।