দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশনও (ইসি) সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বিএনপি বলে আসছে— একটি আসনেও ইভিএমে ভোট নেওয়া যাবে না। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মাঝে ইসি জানিয়েছে— ইভিএমে নয়, ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালটে। ইসির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
ভোটের অন্তত সাত মাস আগে ইভিএম থেকে সরে আসলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার (৩ এপ্রিল) এই সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনে ব্যালট পেপারে এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তবে এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এখনও কোনও মন্তব্য করেননি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট নেওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিল। আওয়ামী লীগও রাজনৈতিকভাবে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছে। এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক নানা কারণে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। সে জন্য ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সবাই।
তার মতে, ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও বেশিরভাগ দল ইভিএমের বিপক্ষে ছিল। এখন ইভিএমে ভোট না করার ইসির সিদ্ধান্তে তারাও আশ্বস্ত হবে, ইসির ওপর আস্থা রাখতে পারবে। অপরদিকে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ইভিএম কেনার প্রকল্প নিয়েছিল ইসি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাতে সরকার সায় দেয়নি। সে জন্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, সেই সিদ্ধান্ত তাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে বিস্তারিত জানানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। তারা স্বাধীনভাবে যে সিদ্ধান্ত নেবে, রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনে চলতে বাধ্য। সে হিসেবে নির্বাচন কমিশন ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই।’
তার মতে, ডিজিটাল বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভালো নির্বাচনের জন্য ইভিএমে ভোট নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন নির্বাচনে এর মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, দ্রুত ভোটগ্রহণ ও ফলাফল পাওয়া যায় ইভিএমে। ব্যালট পেপার চুরি, ছিনতাই, ছিড়ে ফেলা, নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেজন্য ইভিএমে ভোটের পক্ষে আওয়ামী লীগ।
এত ঢাকঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ইভিএমের বদলে কেন ব্যালটে ফিরে এসেছে, তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ লক্ষ্যে ইভিএম মেরামতের জন্য সরকারের কাছে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল ইসি। ওই টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় ৩০০ আসনেই স্বচ্ছ ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।’
এ প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইভিএম মেশিন ক্রয় ও মেরামতের জন্য এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি যৌক্তিক কিনা, সেটিও ভেবে দেখা দরকার।’
জাতীয় নির্বাচনে না হলেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সিটি করপোরেশনের ভোটের তফসিল ঘোষণা করে ইসি জানিয়েছে, পাঁচ সিটিতেই ভোটগ্রহণ করা হবে ইভিএমে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ২১ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গুরুত্ব পেয়েছিল ইভিএম ইস্যুও। সংলাপ শেষে অনধিক দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন সিইসি কাজী হাবিবুলের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ জন্য সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ইভিএম কেনার প্রকল্প নেয় ইসি। কিন্তু তাতে সরকারের সায় না পাওয়ায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়।
ইসি সূত্র জানায়, বিদায়ী নুরুল হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম রেখে গিয়েছিল। সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রায় ৪০ হাজার ইভিএম ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাকি এক লাখ ১০ হাজার ইভিএমও মেরামত করতে হবে। এজন্য ১২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। সুত্র: বিট্রি