নীলফামারীতে দেড় মাস পর অজ্ঞাত শিশুর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুর পরিচয় মিলেছে এবং মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টায় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শিশুটির বাবা ও সৎ মাসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শিশুটির নাম জিহাদ (১২)। তার বাবার নাম জিয়াউর রহমান ও সৎ মায়ের নাম আলেয়া মনি (১৯)। জেলার বিরল উপজেলার একটি ভাড়া বাসায় থাকতো তারা। চলতি বছরের ১৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) জেলার ডিমলার রামডাঙ্গা ফরেস্ট ও সিংগাহাড়া নদীর তীরে একটি তালাবদ্ধ ট্রাংক থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। অজ্ঞাত শিশুর হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পিবিআই, রংপুরকে দায়িত্ব দেয় আদালত।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জুলাই রাতে একটি পিকআপে তালাবদ্ধ ট্রাংক ওই স্থানে ফেলে পালিয়ে যায় কেউ একজন। তা দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পরদিন পুলিশ ট্রাংকটি খুলে বিছানা চাদর ও কাথা মোড়ানো অবস্থায় একটি অর্ধগলিত লাশ পায়। লাশ দেখে মনে করা হয় এটি কোনও যুবকের লাশ। পরে ঘটনাটির তদন্ত পায় পিবিআই, রংপুর। তারা সব কিছু সংরক্ষণ করে এবং যথাযথভাবে তদন্ত শুরু করে। লাশটি ঝলসানো ও অর্ধগলিত থাকায় ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ করে সে সময় শিশুটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নীলফামারীর ডিমলা থানায় একটি মামলা করা হয়।
পিবিআই পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি স্পেশাল টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় এক মাস ১৭ দিন পর অপরাধের মোটিভ, প্রক্রিয়া ও মৃত ব্যক্তির পরিচয়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান পরিচালনা করে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার একটি এনজিওতে কর্মরত অবস্থায় জিহাদের বাবা জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
আটক জিয়াউর রহমানের স্বীকারোক্তি মতে জেলার বিরল উপজেলায় তার ভাড়া বাসা থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জিহাদের সৎ মা আলেয়া মনি (১৯) ও জিয়াউরের শ্বশুর আইয়ুব আলীকে (৫৫) গ্রেফতার করা হয়। ওই বাড়ি থেকে ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার জব্দ করা হয়। যার মাধ্যমে জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়।
পিবিআই জানায়, গ্রেফতার ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সৎ মা আলেয়া মনি এবং তার বাবা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে শিশু জিহাদের বনিবনা না হওয়ায় তারা একত্রে পরিকল্পিতভাবে ১৪ জুলাই রাতে ঘুমন্ত জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত করার জন্য বাসায় ব্যবহৃত একটি স্টিলের ট্র্যাংকে শিশু জিহাদের লাশ ঢুকিয়ে ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার দিয়ে জিহাদের দেহটি অর্ধগলিত করে দেয়।পরে জিহাদের সৎ নানা আইয়ুব আলী পাশের মীম ভ্যারাইটিজ স্টোর হতে দুইটি চাইনিজ তালা কিনে এনে ট্রাংকটি তালাবদ্ধ করে। পরে লাশ ট্রাংকে ভরে অপসারণের জন্য বিরল হাসপাতালের গেটের সামনে হতে একটি নীল রঙের ছোট পিকআপ ভ্যান ১৩ হাজার টাকায় ভাড়া করে। এরপর পিকআপটি নীলফামারীর ডিমলার ওই স্থানে এসে গভীর রাতে নদীর ধারে ট্র্যাংকটি ফেলে পালিয়ে যায়। উক্ত পিক আপের মালিক ও ড্রাইভার ইসমাঈলকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়। জিহাদ হত্যাকাণ্ডে তার বাবা, সৎ মা, সৎ নানা ও পিকআপচালকসহ এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, পিবিআই এসআই মো. ইকরামুল হক এই মামলা তদন্ত করছেন। তাকে পিবিআই এর একটি স্পেশাল টিম সহায়তা করছে। এ মামলার তদন্ত এখনও অব্যাহত রয়েছে।