নারায়ণগঞ্জে মা ও শিশু সন্তান হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ঘাতক সাদিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সাদিকে গ্রেফতারের পর প্রতিবেশি রাজিয়া সুলতানা কাকলি এবং তার ৮ বছরের শিশু সন্তান তালহা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
গ্রেফতারকৃতের নাম সাদিকুর সাদি (২৪)। । শনিবার (৯ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানার ব্রাহ্মণদী ইউনিয়নের উজান গোবান্দি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সাদিকুর সাদি (২৪)কে গ্রেফতার করে পিবিআই।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২ জুলাই দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মণদী ইউনিয়নের উজান গোবান্দি এলাকার নিজ বাড়িতে কাকুলি ও তার শিশু সন্তান তালহা খুন হয়। আলামত হিসেবে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি লোহার হাতলযুক্ত বঁটি, একটি ইস্ত্রি মেশিন ও একটি রক্তমাখা ওড়না জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত সাদি আইপিএল খেলায় জুয়া খেলে নিজের সব টাকা খুইয়ে আরও ৭০ হাজার টাকা ঋণী হয়ে পড়ে। অসহায় অবস্থায় সে পাশের বাড়ির ভাবি রাজিয়া সুলতানা কাকুলির কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চায়। টাকা না পেয়ে স্বর্ণালঙ্কারের লোভে কাকুলি ও তার ৮ বছরের শিশু সন্তান তালহাকে গলাকেটে হত্যা করে । ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কাকলির বাড়ির আশপাশে হাঁটাহাঁটি করতে থাকে সাদিকুর। রাতে আশপাশের লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে কাকুলির ঘরের দরজায় নক করে দরজা খুলতে বলে সাদি। সে ভেতরে গিয়ে কাকুলির কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চায়, টাকা না পেয়ে স্বর্ণালঙ্কারের লোভে মা-ছেলেকে খুন করে সাদি।
তারপর সে আলমারি খুলে স্বর্ণালংকার (দুটি স্বর্ণের আংটি, দুটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল) নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পিবিআই প্রধান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় পিবিআই সদস্যরা দেখতে পান কাকুলির ঘরের পেছনে একটি সুপারি গাছে মাটি লেগে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ বেয়ে উঠেছে, কিন্তু গাছে সুপারি নেই। আবার গাছ বেয়ে ওই ঘরে প্রবেশের সুযোগও নেই। তবে, গাছে উঠে ভেন্টিলেটর দিয়ে কাকুলির ঘরের ভেতরটা দেখা যায়।
হত্যাকান্ডের সময় গাছ বেয়ে কেউ উঠেছে এমন ধারণা করে খোঁজ করতে থাকেন পিবিআই সদস্যরা। এক পর্যায়ে জানা যায়, বাড়ির পেছনে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ থাকায় কাকুলির ভাসুরের ছেলে অজিদ কাজীসহ (১৬) কয়েকজন সেখানে বসে ভিডিও গেম খেলে।
অজিদ কাজীকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানায়, গত ২ জুলাই রাতে সে ওই ঘরের পেছনে বসে অনলাইনে গেম খেলছিল। ওই দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে হঠাৎ কাকুলির ছেলে ভিকটিম তালহার চিৎকার শোনা যায়। এরপর অজিদ কৌতুহলবশত সুপারি গাছ বেয়ে উপরে ওঠে ভেন্টিলেটর দিয়ে সাদিকে দেখতে পায়।
এরপর সাদিকে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে অজিদ। সে ভাবে কাকুলির সঙ্গে সাদির অবৈধ সম্পর্ক আছে । পরে তার দেওয়া তথ্যমতে সাদিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন,মালয়েশিয়া প্রবাসী স্বামী আড়াইবছর আগে মারা যাওয়ার পর কাকুলি তার সন্তানকে নিয়ে ওই ঘরেই বসবাস করতেন। তার কাছে টাকা-পয়সা আছে ভেবে ধার চাওয়ার পরিকল্পনা করেন সাদি। এলাকার ভালো ছেলে হিসেবে মনে করে, সাদিকে বিশ্বাস করে আলমারি খুলে কাকুলি দেখান, তার কাছে দেওয়ার মতো কোন টাকা নেই। মাত্র ১শ’ টাকা আছে। আলমারি খুললে সাদি দেখতে পায় সেখানে কিছু স্বর্ণালঙ্কার রাখা আছে। সাদি ওড়না দিয়ে কাকুলির গলা পেঁচিয়ে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়,এরপর ইস্ত্রি দিয়ে মাথায় আঘাত করে সে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে বটি দিয়ে গলা কাটে সাদি। তখন সাদি ভাবে কাকুলির ছেলেও হয়তো তাকে দেখে চিনে ফেলেছে। তাই শিশু তালহাকেও গলা কেটে হত্যা করে সাদি। এরপর কাকুলির আলমারি থেকে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সাদির দেয়া তথ্যমতে আড়াইহাজার থানার ডরগাঁও এলাকার ক্ষুদ্র স্বর্ণের দোকানদার গোপালের কাছে থেকে একটি স্বর্ণের আংটি এবং একটি চেইন জব্দ করা হয়। এগুলো সাদির মায়ের স্বর্ণ উল্লেখ করে সে ১৭ হাজার টাকায় গোপালের কাছে বন্ধক রেখেছিল ।
সাদি নারায়ণগঞ্জ আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষি অজিদ কাজীও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।