1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কু‌মিল্লায় সাংবা‌দিক‌দের সা‌থে পু‌লিশ সুপা‌রের মত‌বি‌নিময় নারায়নগন্জ মহানগর বিএনপির র‍্যালিতে কৃষক দলের অংশগ্রহন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে নারায়ণগ‌ঞ্জে বিএন‌পির র‍্যালি গোপালগ‌ঞ্জে দিনমুজুর‌কে হত্যা মামলায় গ্রেফতার, নবজাতক দুই বোন নিয়ে দিশেহারা ছোট ভাই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ কর‌তে হ‌বে, না করলে প্রশাসক নিয়োগ হ‌বে- সাখাওয়াত বাংলাদেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিবে আজারবাইজানে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সিপিজের খোলা চিঠি ড. ইউনুসকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম গ্রেফতার শপথ নিলেন নতুন তিন উপদেষ্টা

হঠাৎ বন্যায় বানভাসি-অর্ধকোটি মানুষ দুর্বিপাকে

নাগরিক খবর অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২
  • ২৮৬ বার পঠিত

সিলেট আর সুনামগঞ্জ এখন এক অচেনা নগর, অচেনা শহর। বিদ্যুৎ নেই, রাত নামলেই ঘুটঘুটে আঁধার চারদিক। চারপাশে পানি খেলা করলেও নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি। চলছে খাবারের মহাসংকট। রেলপথ, সড়কপথ, আকাশপথ- সব পথেই বানের বাগড়া। আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোন, ধুঁকছে নেটওয়ার্ক। বানের পানিতে সিলেট অঞ্চলের অন্তত অর্ধকোটি মানুষ বন্দি। উপদ্রুত অঞ্চলে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। তবে বিপন্ন মানুষের জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল। সহায়সম্বল সব হারিয়ে বহু মানুষের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। চিকিৎসাসেবায় ঘটেছে বিঘ্ন।

সবচেয়ে দুর্বিপাকে সুনামগঞ্জ। পুরো জেলা ডুবে থাকায় প্রকৃত খবর জানার মাধ্যমগুলো স্তিমিত হয়ে আসছে। মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ তাদের দুর্ভোগের কথা জানাতে পারছে না কাউকে। এতে দেশের অন্য প্রান্ত ও বিদেশে থাকা স্বজনরা সময় কাটাচ্ছেন উৎকণ্ঠায়। সরকারের জরুরি পরিষেবাও অনেকটা অচল। কয়েকটি স্থানে ইউএনও, ওসিসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূূর্ণ ব্যক্তিদের ফোনও কাজ করছে না।

বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন ও বাস চলাচল। উড়ছে না উড়োজাহাজও। একমাত্র সম্বল নৌকা ভাড়া হয়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ। সুনামগঞ্জে বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাংকিং সেবা। সিলেটেও তা বন্ধ হওয়ার পথে। মানুষ সিলেট ও সুনামগঞ্জ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সেটাও এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে।

এরই মধ্যে উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্থানে মাঝারি থেকে ভারি, কোথাও অতিভারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ দেশের বড় নদীগুলোতে পানি বাড়তে পারে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে যেতে পারে।

এদিকে ঢাকায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ভাষ্য, আগামীকাল সোমবার থেকে সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে উত্তরাঞ্চলে আরও তিন থেকে চার দিন পানি বাড়তে থাকবে।

সিলেট বিভাগের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এর আগে প্লাবিত এলাকায়ও বন্যার পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সুরমা নদীর পর কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ আশপাশ এলাকায় নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত রয়েছে।

সিলেট বিভাগের চার জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের অনেক উপজেলায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর পর নৌ ও বিমানবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া কোস্টগার্ডকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতার জন্য।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ সংলগ্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় সরাসরি ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। কুমারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রিড উপকেন্দ্রসহ বিদ্যুৎ স্থাপনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পুরো নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে অবশ্য কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। দু’দিন ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হওয়ার পর এবার তা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্নিষ্টরা। এদিকে, কদমতলীতে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পানি ওঠায় যে কোনো সময় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গতকাল শনিবার ভারি বর্ষণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নগরীতে সকালে টানা বর্ষণে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর হাজারো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছোটে। দুপুরে বৃষ্টিপাত সাময়িক বন্ধ হলে শত শত নারী-পুরুষ-শিশুকে সামান্য কাপড়চোপড় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে দেখা গেছে। পরিবহন নেতা আবদুল গফুর জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের পর সিলেট জেলার সবক’টি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা-সিলেটসহ দূরপাল্লার বাস এখনও চলছে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময় তা বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি জানান, পরিবহন সেক্টরের অনেকের বাড়িঘর প্লাবিত।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় চিকিৎসাসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে আইসিইউ ও অপারেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের বিশেষ জেনারেটরটি আনার চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের নিচতলায় পানি ওঠায় নিজস্ব জেনারেটর চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে একই পরিস্থিতি হওয়ায় রোগী ও স্বজনরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য নগরীর হোটেল-রেস্টুরেন্টের সিংহভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সিলেট নগরীর সুরমা নদীতীরবর্তী সবক’টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ শহরসহ সদর উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে শুরু করেছে। মৌলভীবাজারেও ব্যাপক বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে নতুন নতুন উপজেলা প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম বাড়াচ্ছি। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় প্রচুর সংখ্যক মানুষ উদ্ধারের অপেক্ষায় আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বয় করে তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে।

এদিকে, দ্রুতগতিতে পানি বাড়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা থেকে শত শত মানুষ নৌকায় করে আশ্রয়ের সন্ধানে নগরীর উপকণ্ঠে আসছে। এ সময় তাদের সঙ্গে গবাদি পশুও দেখা গেছে। তবে নৌকার অভাবে অনেকেই আসতে পারছে না বলে তারা জানিয়েছে। এ ছাড়া জনপ্রতি নৌকার ভাড়া দেড় থেকে দুই হাজার টাকা হওয়ায় অনেকে সামর্থ্যের অভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে রওনা হতে পারছে না। অসহায় ও হতদরিদ্র অনেক মানুষ বাড়িঘরের ওপরে আশ্রয় নিয়েছে বলে উপদ্রুত এলাকা থেকে আসা মানুষজন জানিয়েছে।

এদিকে, রানওয়েতে পানি উঠে যাওয়ায় শুক্রবার সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য সিলেট-লন্ডন রুটের ফ্লাইটের শিডিউলও পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ। তিনি জানান, গতকাল শনিবার ও আজ রোববার সিলেট-লন্ডন রুটে বিমানের দুটি ফ্লাইট ছিল। রানওয়েতে পানি উঠে যাওয়ায় এই ফ্লাইট শিডিউল পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন শিডিউল অনুযায়ী, ১৮ জুনের ফ্লাইট ২১ জুন এবং ১৯ জুনের ফ্লাইট ২৩ জুন যাবে।

সুনামগঞ্জবাসী মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে: জেলার তিনটি উপজেলার শতভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। অন্যান্য উপজেলারও ৮০-৯০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি। হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে মানুষ। শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরতলির হাছনবাহারে গিয়ে দেখা গেছে, ২০০ পরিবারের একটি পরিবারও গ্রামে নেই। গ্রামের বেশিরভাগ ঘরের চাল ছুঁয়েছে পানি।

গ্রামের সবাই শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। শহরতলি এবং শহরের বানভাসি মানুষ অন্যের ভবনের তালা ভেঙেও ভেতরে ঢুকছে আশ্রয়ের জন্য। তবে শুকনো খাবার বা কোনো প্রকার খাবারই পাওয়া যাচ্ছে না। পানি উঠে যাওয়ায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। কোনো দোকান খোলা দেখলেই বানভাসি অসংখ্য মানুষ ভিড় করছে। দোকানের মালপত্র কেউ কেউ টাকা-পয়সা দিয়ে নিচ্ছে; আবার কেউ কেউ জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পানিবন্দি মানুষ আশ্রয়ের জন্য নৌকা দেখলেই চিৎকার করে ডাকছে। ছোট ছোট বারকি নৌকা নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি ও মারধরের ঘটনাও ঘটছে। আশ্রয়কেন্দ্রেও অনেকটা অনাহারে আছে মানুষ।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জের হাওরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়ির উঠান, বসতবাড়ি, দোকানপাট, গোয়ালঘর, ধানের গোলাঘরসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছে।

উত্তরাঞ্চলের নদনদীর পানি বাড়ছে: উজানের পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলের সব নদনদীর পানি বাড়ছে। ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা দেখা দিয়েছে নদীগুলোর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরে। কিছু এলাকায় পানি কমলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন। বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, উজানের ঢলে যে কোনো সময় বাড়তে পারে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি।

ময়মনসিংহে ৫০ গ্রামের বহু মানুষ পানিবন্দি: গত বর্ষায় গারো পাহাড়ের পাদদেশের সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে প্লাবন হয়েছিল। চারটি পয়েন্টে বাঁধ ভাঙার কারণে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বছর পেরিয়ে সেই বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় চলতি ২ জুন। বর্ষার মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ বাঁধার আয়োজন ভেসে যায় পানির তোড়ে। গত শুক্রবার পাহাড়ি ঢলে ভেঙে যায় সামান্য বাঁধ; প্লাবিত হয় উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি জীবনযাপন করছে অন্তত ১৮ হাজার মানুষ।

অন্যান্য জেলার চিত্র: ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার বন্যার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জেলার ১০ উপজেলায় পানি বাড়ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত দু’দিনের বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কালনী-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এরই মধ্যে জেলার দুই উপজেলার অন্তত ৪০টি গ্রামের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জামালপুরের বকশীগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বর্ষণের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

কুড়িগ্রামে বানের পানিতে ভাসছে চর, দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলের আড়াই শতাধিক গ্রাম। এসব গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। গাইবান্ধা জেলার সবক’টি নদনদীর পানি হুহু করে বেড়ে চলেছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্য থেকে জুড়ী নদী হয়ে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ ‘হার্ড-পয়েন্ট’ ও কাজীপুরে যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপরে। উজানের পানি বাড়ায় গত ক’দিন থেকে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অবিরাম বৃষ্টির জেরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ৩০টি গ্রাম কার্যত বিপর্যস্ত। মোহনগঞ্জ- ময়মনসিংহ রেলপথে নেত্রকোনার বারহাট্টা এলাকায় বন্যার পানির প্রবল চাপে অতিথপুর স্টেশনের কাছে ইসলামপুর এলাকায় রেলব্রিজ ভেঙে গেছে। এতে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

বন্যার পূর্বাভাস: বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবারের আগে সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আশা নেই। উত্তরাঞ্চলে আরও তিন থেকে চার দিন পানি বাড়তে থাকবে। এরই মধ্যে দেশের ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সোমবার থেকে পানি ভৈরব বাজার হয়ে নেমে যাবে। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে আরও তিন থেকে চার দিন বন্যার পানি বাড়তে থাকবে। যমুনা অববাহিকায়ও পানি বাড়তে থাকবে। তবে পরিস্থিতির খুব একটা অবনতি হবে না এ সময়ে।

গতকাল শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশেই আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হবে। কোথাও মাঝারি, কোথাও ভারি। আবার চার বিভাগে অতিভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। সুত্র:সমকাল

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com