নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার দায়িত্বরত কারিগরি খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ও মোটা অংকের উৎকোচ দাবির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ডিমলা উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে বুধবার মিলাররা লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল ডিমলা সরকারি খাদ্য গুদামের মিলাররা ধান ছাঁটাইয়ের জন্য খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। তারা চুক্তিবদ্ধ ধান গুদাম হতে তাদের নিজ নিজ মিলে নিয়ে গিয়ে ধান হতে চাল করার জন্য সিদ্ধ শুকনা ধান ছাঁটাই করে সম্পূর্ণ চাল সর্টার মেশিনে বাছাই করে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক চাল ও খালি বস্তা গুদামে জমা প্রদান করেন। তৎকালীন ডিমলা উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) হিমাংশু কুমার রায় জমাকৃত চাল ও খালি বস্তা বুঝে পেয়ে মিলারদের কাছে চুক্তিকৃত চালের বিষয়ে আর কোনো দেনা-পাওনা নাই মর্মে ছাড়পত্র প্রদান করেন।
পরে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায় নিজেই খাদ্য গুদামে রক্ষিত ১৮৯ দশমিক ২৭০ মে. টন চাল ও ৫০ কেজি সাইজের ১৩ হাজার ৯৬৫টি বস্তা আত্মসাৎ করলে ডিমলা খাদ্য বিভাগে জটিলতায় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সরকারিভাবে তদন্তাধীন থাকায় মেসার্স ভাই ভাই সেমি অটো রাইচ ও অয়ন হাসকিং মিলের প্রোপাইটার অলিউর রহমান তার ১০০ টন ধানের ছাঁটাইকৃত চাল খাদ্য গুদামে সরবরাহ করতে দেরি হয়। পরবর্তীতে অফিসিয়াল আদেশে গত ২৫ মার্চ হতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পাওনা চাল গুদামে সরবরাহ করা জন্য চিঠি প্রদান করা হয়।
গত ২৪ আগস্ট রংপুর ও নীলফামারী দায়িত্বরত কারিগরি খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন সরকার ডিমলা খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে আসেন। গুদামের অন্যান্য খামাল ভৌত বিশ্লেষন না করে তিনি সরাসরি সরবরাহ চালের খামাল ডিমলা খাদ্য গুদামের এফএ-৩ গুদামের ৫৪নং খামালটি পরিদর্শন করে ফলিত চাল খারাপ বলে মিলারদের কাছে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দাবি করেন বলে মিলাররা অভিযোগ করেন। মিলাররা জাকির হোসেনের দাবিকৃত উৎকোচের বেশিরভাগ টাকা প্রদান করলেও তার চাহিদা অনুযায়ী বাকি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জাকির হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে মিলারগণের সরবরাহ চাল খারাপ মর্মে চিঠি প্রদান করেন। জাকির হোসেন তার চাহিদা অনুযায়ী উৎকোচের বাকি টাকা না পেয়ে মিলারদের চুক্তিবদ্ধ জামানতের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানাসহ ১৩টি মিলের চুক্তি বাতিল করে কালোতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পাঁয়তারা করছে। অপরদিকে মিলাররা তাদের জামানতের টাকা ফেরত না পেয়ে ব্যবসা পরিচালনায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কারিগরি খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন সরকার ইতোপূর্বে রংপুরের একজন ওসিএলএসডি জাহিদ পারভেজের কাছে তদন্তের নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান নীলফামারী সদরের ওসিএলএসডি যখন গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জে ছিলেন তখন তার কাছেও মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করে না পেয়ে তাকেও হয়রানি করার অভিযোগ রযেছে। জাকির হোসেনকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্তের দায়িত্ব দিলেই তিনি ঘুষের ব্যবসা শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে গুদামে রক্ষিত চালের ভালোমন্দ যাচাই করার দায়িত্বকে তিনি হাতিয়ার হিসেবে বিভিন্ন সময় ব্যবহার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছে।
ডিমলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায় খাদ্য গুদামে রক্ষিত ১৮৯ দশমিক ২৭০ মে. টন চাল ও ৫০ কেজি সাইজের ১৩ হাজার ৯৬৫টি বস্তা আত্মসাৎ করার বিষয়ে ২য় দফায় তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন জাকির হোসেন সরকার। তদন্তকালে তিনি নিজেই আত্মসাৎ করার বিষয়ে জড়িত থাকায় তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য প্রতিনিয়ত তদন্তের নামে ডিমলা খাদ্য গুদামে ভূরিভোজের আয়োজন ও গাড়িভাড়া বাবদ অর্থ আদায় করারও অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী বলেন, আত্মসাৎকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায়ের সঙ্গে তার সখ্যতা থাকায় বিভিন্ন সময় কারণে অকারণে তিনি গাড়ি নিয়ে ডিমলা খাদ্য গুদামে এসে গাড়ি বোঝাই করে খাসি, মুরগি, ফলমুল ও হলুদ খামে নগদ টাকা নিয়ে যেতেন।
কারিগরি খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন সরকার মোবাইল ফোনে বলেন, আমি অলিউর রহমানকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তবে অটোরাইচ মিল দুটি চিনি। আমার বিরুদ্ধে কোনো মিলার হয়রানি ও উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ দিলে আপনি লিখতে পারেন।