1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কু‌মিল্লায় ডাকাতির নাটক সাজিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতিজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ক‌রে চাচা রাজধানীর কাকরাইলে সভা সমা‌বেশ নি‌ষিদ্ধ নারায়ণগঞ্জ মহানগর ১৪ নং ওয়ার্ড কৃষক দলের কমিটি অনুমোদন শোক সংবাদ: নারায়ণগ‌ঞ্জের রিটন দে আর নেই সারজিস ও হাসনাতকে রংপু‌রে অবাঞ্ছিত ঘোষণা জাতীয় পার্টির নারায়নগঞ্জের কালিরবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সাবেক ছাত্র দলের সভাপতি জাকির খানের মুক্তির দাবীতে নগরীতে বিক্ষোভ ও মিছিল। দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না : সাকি।বিস্তারিত ভিডিও তে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছেন প্রধান উপদেষ্টা সোনাইমুড়ী উপজেলায় বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদ

জেলখানায় বসে জাল নোট তৈরির পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য ঈদ মার্কেট

মাসুম মোল্লা:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৬৩ বার পঠিত

রাজধানীর নীলক্ষেতের একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতেন তাইজুল ইসলাম লিটন। সেখান থেকে কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে জাল টাকা বানানোর কাজে নামেন। একপর্যায়ে জাল টাকাসহ ধরা খেয়ে তিন বছর সাজাও খাটেন। কারাগারেই তার পরিচয় হয় অন্য মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম, আলী হায়দার ও মহসিন ইসলামের সঙ্গে। এরপর তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে রাজধানীর লালবাগে একটি বাসা ভাড়া করে গড়ে তোলেন জাল টাকার বিশাল এক সিন্ডিকেট।

তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রোজার আগে ও মাঝামাঝিতে জাল টাকা তৈরি করে সারাদেশের মার্কেটগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৫ দিনে এক কোটি টাকার জাল নোট তৈরি করে চক্রটি। তারা শুধু বাংলাদেশি জাল নোটই নয় ভারতীয় জাল রুপিও তৈরি করেছিল। রুপি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল ভারতে পাচার করা।

গত ১২ এপ্রিল রাজধানীর নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সন্ধান পায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ জাল বাংলাদেশি টাকা ও দেড় লাখ ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ সামনে রেখে বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল এই চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারির পর তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গত ৩ জানুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে জাল নোট তৈরির মূলহোতা ছগির হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেফতারচক্রের মূলহোতা ছগির নিজেই পুরান ঢাকা থেকে জাল টাকা তৈরির উপকরণ টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি ক্রয় করেন। এরপর তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে চার সাইজের দুটি টিস্যু পেপার এক করে আঠা লাগিয়ে রঙিন প্রিন্টারে টাকা তৈরি করতেন। প্রিন্টের কাজ তিনি নিজেই করতেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রিন্টিংয়ের কাজে অন্যদের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল টাকা তৈরির পর সহযোগীদের মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে নোট নিয়ে যেতে বলতেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বছরজুড়েই জাল মুদ্রা তৈরি চক্রের সদস্যরা জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করে। তবে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব সামনে রেখে চক্রগুলো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে বেশ কয়েকটি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেকে নজরদারিতে রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জানায়, চক্রের সদস্যরা বাজারে এত জাল নোট ছাড়লেও তা সাধারণত চিহ্নিত হচ্ছে কম। প্রযুক্তির কারণে জাল নোটের কারিগররা প্রায় হুবহু আসল নোটের মতোই নোট তৈরি করছে। সাধারণ মানুষ নতুন বা বড় অঙ্কের নোট পেলে তাতে ধার রয়েছে কি না বা নিরাপত্তা সুতা, জলছাপ রয়েছে কি না তা দেখে যাচাই করেন। কিন্তু আসল নোট সম্পর্কে পুরো ধারণা না থাকায় যাচাই সবসময় সঠিকও হয় না। তাছাড়া অনেক আসল নোটের ভেতর জাল নোট দেওয়ায় সবসময় তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। এসব পরিস্থিতি কাজে লাগায় চক্রের সদস্যরা। নানা হাত ঘুরে যখন জাল নোটটি শনাক্ত হয়, তখন আইনি ঝামেলা এড়াতে সাধারণ মানুষ তা আর প্রকাশ না করে ধ্বংস করে ফেলেন। এজন্য বাজারে জাল নোট থাকলেও তা ধরা পড়ে কম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলেও বিক্রি হচ্ছে জাল নোট। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফেসবুকের কয়েকটি পেজ ও গ্রুপে এরই মধ্যে জাল নোটের বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সেখানে তারা ই-মেইল আইডি ও মোবাইল নম্বরও দিয়েছে।

পুলিশের সাইবার ইউনিট বলছে, ফেসবুকে এ ধরনের জাল টাকার বিজ্ঞাপন অহরহ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ভুয়া পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা নিয়ে পরে আর জাল নোট দেয় না। অর্থাৎ প্রতারণা করে। তবে আমাদের সাইবার ওয়ার্ল্ডের নিরাপত্তা সবসময় মনিটরিংয়ে রাখা হয়।

এ বিষয়ে ডিএমপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠছে জাল টাকার কারখানা। সেখানে ল্যাপটপে কমান্ড দিতেই বেরিয়ে আসছে পাঁচশ-হাজার টাকার নোট। এমনকি ছাপা হচ্ছে ভারতীয় রুপিও। এরপর সেখান থেকে অসাধু চক্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারাদেশে। ১২ বছর ধরে এই লাইনে অর্থাৎ জাল টাকার কারবার করে আসছিলেন সম্প্রতি গ্রেফতার জাল নোট কারবারের মূলহোতা লিটন। তিনি আগেও জাল টাকা তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। কারাগারে অন্য আসামিদের সহযোগী বানান তিনি। কারাগার থেকে বেরিয়ে আবারও শুরু করেন একই অপকর্ম। শুধু ৫০০ কিংবা এক হাজার টাকার নোটই নয়, চক্রটি ৫০ ও ১০০ টাকারও জাল নোট তৈরি করতো।

তিনি বলেন, চক্রটি আগে ছোট কম্পিউটার ও প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্ট করলেও বর্তমানে আরও উন্নত মানের জাল নোট তৈরি করতে অত্যাধুনিক প্রিন্টার ব্যবহার করে। এসব প্রিন্টারের দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আমরা দেখেছি তারা সুন্দর করে ৫০ ও ১০০ টাকার নোটও জাল করতো। এই প্রিন্টার দিয়ে মুহূর্তেই ১০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার জাল নোট প্রিন্ট হয়ে আসে। জাল টাকা যারা বানান তারা বছরব্যাপী অল্প বানালেও ঈদকে টার্গেট করে বেশি পরিমাণে লেনদেন হওয়ায় তারা বেশি পরিমাণে বানান।

সারাদেশের চেয়ে ঢাকা শহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সবচেয়ে বেশি হলেও ঢাকায় কেন জাল টাকা তৈরির কাজটি হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জাল টাকার নোট সবচেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে ঢাকায়। তৈরি ঢাকায় হলেও জাল টাকার তৎপরতা বেশি গ্রামাঞ্চলে। কারণ ঢাকায় নিরাপত্তা সুতা ও জাল নোটের অন্যান্য উপকরণ সহজে পাওয়া যাচ্ছে।

জাল টাকা চেনার বিভিন্ন পদ্ধতি জানিয়ে মশিউর রহমান বলেন, জাল নোট চেনার সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত পদ্ধতি হলো থুতু অথবা সামান্য পানি লাগিয়ে দেখবেন নোটের রঙ উঠে যায় কি না। যদি রঙ উঠে তাহলে সেটি জাল। জাল টাকা সরবরাহকারীকে ধরে নিকটস্থ পুলিশকে খবর দিন অথবা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, রোজা, ঈদ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে জাল টাকার কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই কাজে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে। সাইবার ওয়ার্ল্ডেও র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরারি রয়েছে। করে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় এক কোটি ২০ লাখ টাকা সমমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল ফোন সেট, দুটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, তিনটি প্রিন্টারসহ জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

র‌্যাব জানায়, কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তাপর্যায়ে এসব জাল নোট ছড়িয়ে দিতে দেশজুড়ে তাদের ডিলার ছিল। পুরো এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে খরচ হতো মাত্র চার হাজার টাকা। এর মধ্যে এক হাজার টাকার নোটের এক লাখ টাকার বান্ডিল বিক্রি হতো ১৫ হাজারে। ৫০০ টাকার নোটের এক লাখের বান্ডিল বিক্রি হতো ১০ হাজার টাকায়।

চক্রের মূলহোতা ছগির নিজেই পুরান ঢাকা থেকে জাল টাকা তৈরির উপকরণ টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি ক্রয় করেন। এরপর তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে চার সাইজের দুটি টিস্যু পেপার এক করে আঠা লাগিয়ে রঙিন প্রিন্টারে টাকা তৈরি করতেন। প্রিন্টের কাজ তিনি নিজেই করতেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রিন্টিংয়ের কাজে অন্যদের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল টাকা তৈরির পর সহযোগীদের মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে নোট নিয়ে যেতে বলতেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বছরজুড়েই জাল মুদ্রা তৈরি চক্রের সদস্যরা জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করে। তবে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব সামনে রেখে চক্রগুলো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে বেশ কয়েকটি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেকে নজরদারিতে রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জানায়, চক্রের সদস্যরা বাজারে এত জাল নোট ছাড়লেও তা সাধারণত চিহ্নিত হচ্ছে কম। প্রযুক্তির কারণে জাল নোটের কারিগররা প্রায় হুবহু আসল নোটের মতোই নোট তৈরি করছে। সাধারণ মানুষ নতুন বা বড় অঙ্কের নোট পেলে তাতে ধার রয়েছে কি না বা নিরাপত্তা সুতা, জলছাপ রয়েছে কি না তা দেখে যাচাই করেন। কিন্তু আসল নোট সম্পর্কে পুরো ধারণা না থাকায় যাচাই সবসময় সঠিকও হয় না। তাছাড়া অনেক আসল নোটের ভেতর জাল নোট দেওয়ায় সবসময় তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। এসব পরিস্থিতি কাজে লাগায় চক্রের সদস্যরা। নানা হাত ঘুরে যখন জাল নোটটি শনাক্ত হয়, তখন আইনি ঝামেলা এড়াতে সাধারণ মানুষ তা আর প্রকাশ না করে ধ্বংস করে ফেলেন। এজন্য বাজারে জাল নোট থাকলেও তা ধরা পড়ে কম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলেও বিক্রি হচ্ছে জাল নোট। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফেসবুকের কয়েকটি পেজ ও গ্রুপে এরই মধ্যে জাল নোটের বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সেখানে তারা ই-মেইল আইডি ও মোবাইল নম্বরও দিয়েছে।

পুলিশের সাইবার ইউনিট বলছে, ফেসবুকে এ ধরনের জাল টাকার বিজ্ঞাপন অহরহ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ভুয়া পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা নিয়ে পরে আর জাল নোট দেয় না। অর্থাৎ প্রতারণা করে। তবে আমাদের সাইবার ওয়ার্ল্ডের নিরাপত্তা সবসময় মনিটরিংয়ে রাখা হয়।

এ বিষয়ে ডিএমপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠছে জাল টাকার কারখানা। সেখানে ল্যাপটপে কমান্ড দিতেই বেরিয়ে আসছে পাঁচশ-হাজার টাকার নোট। এমনকি ছাপা হচ্ছে ভারতীয় রুপিও। এরপর সেখান থেকে অসাধু চক্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারাদেশে। ১২ বছর ধরে এই লাইনে অর্থাৎ জাল টাকার কারবার করে আসছিলেন সম্প্রতি গ্রেফতার জাল নোট কারবারের মূলহোতা লিটন। তিনি আগেও জাল টাকা তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। কারাগারে অন্য আসামিদের সহযোগী বানান তিনি। কারাগার থেকে বেরিয়ে আবারও শুরু করেন একই অপকর্ম। শুধু ৫০০ কিংবা এক হাজার টাকার নোটই নয়, চক্রটি ৫০ ও ১০০ টাকারও জাল নোট তৈরি করতো।

তিনি বলেন, চক্রটি আগে ছোট কম্পিউটার ও প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্ট করলেও বর্তমানে আরও উন্নত মানের জাল নোট তৈরি করতে অত্যাধুনিক প্রিন্টার ব্যবহার করে। এসব প্রিন্টারের দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আমরা দেখেছি তারা সুন্দর করে ৫০ ও ১০০ টাকার নোটও জাল করতো। এই প্রিন্টার দিয়ে মুহূর্তেই ১০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার জাল নোট প্রিন্ট হয়ে আসে। জাল টাকা যারা বানান তারা বছরব্যাপী অল্প বানালেও ঈদকে টার্গেট করে বেশি পরিমাণে লেনদেন হওয়ায় তারা বেশি পরিমাণে বানান।

সারাদেশের চেয়ে ঢাকা শহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সবচেয়ে বেশি হলেও ঢাকায় কেন জাল টাকা তৈরির কাজটি হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জাল টাকার নোট সবচেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে ঢাকায়। তৈরি ঢাকায় হলেও জাল টাকার তৎপরতা বেশি গ্রামাঞ্চলে। কারণ ঢাকায় নিরাপত্তা সুতা ও জাল নোটের অন্যান্য উপকরণ সহজে পাওয়া যাচ্ছে।

জাল টাকা চেনার বিভিন্ন পদ্ধতি জানিয়ে মশিউর রহমান বলেন, জাল নোট চেনার সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত পদ্ধতি হলো থুতু অথবা সামান্য পানি লাগিয়ে দেখবেন নোটের রঙ উঠে যায় কি না। যদি রঙ উঠে তাহলে সেটি জাল। জাল টাকা সরবরাহকারীকে ধরে নিকটস্থ পুলিশকে খবর দিন অথবা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, রোজা, ঈদ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে জাল টাকার কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই কাজে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে। সাইবার ওয়ার্ল্ডেও র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরারি রয়েছে।

সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তরের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, নিরাপত্তা সুতাসহ বঙ্গবন্ধুর ছবি ও মহাত্মা গান্ধীর ছবি প্রিন্ট দিয়ে জাল টাকা তৈরি করে এমন চক্রের সন্ধানও পাই আমরা। তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও হিলি হয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এসব জাল টাকা ও রুপি পাচার করে আসছিল। দীর্ঘদিন ধরে তাদের নজরদারিতে রেখে অভিযান চালানো হয়। মাত্র ১৫ দিনে এক কোটি টাকা তৈরি করে চক্রটি। কয়েকদিন পরেই ঈদ। ঈদ সামনে রেখে যাতে করে আর কেউ জাল নোট তৈরি না করতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।

এক. ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকাসহ প্রত্যেক ধরনের নোটের সামনে ও পেছন দুদিকের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান ও ৭টি সমান্তরাল সরল রেখা উঁচু নিচুভাবে মুদ্রিত থাকে। ফলে হাত দিলে একটু খসখসে মনে হয়।

দুই. নোটের ডান দিকে ১০০ টাকার ক্ষেত্রে তিনটি, ৫০০ টাকার ক্ষেত্রে ৪টি ও এক হাজার টাকার নোটে ৫টি ছোট বৃত্তাকার ছাপ আছে, যা হাতের স্পর্শে উঁচু নিচু লাগে। এ বৈশিষ্ট্য জালনোটে সংযোজন করা সম্ভব নয়।

তিন. জাল নোটের জলছাপ অস্পষ্ট ও নিম্নমানের হয়। আসল নোটে ‘বাঘের মাথা’ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘মনোগ্রামর স্পষ্ট জলছাপ আছে, যা ভালো করে খেয়াল করলে আলোর বিপরীতে দেখা যায়।

চার. প্রত্যেক মূল্যমানের নোটেই বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো সংবলিত নিরাপত্তা সুতা থাকে। নোটের মূল্যমান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো নিরাপত্তা সুতার চারটি স্থানে মুদ্রিত থাকে।

এ নিরাপত্তা সুতা অনেক মজবুত, যা নোটের কাগজের সঙ্গে এমনভাবে সেঁটে দেওয়া থাকে যে নখের আঁচড়ে বা মুচড়িয়ে সুতা কোনোভাবেই তোলা সম্ভব নয়। নকল নোটে এতো নিখুঁতভাবে সুতাটি দিতে পারে না।

পাঁচ. ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটের উপরের ডান দিকে কোনায় ইংরেজি সংখ্যায় লেখা নোটের মূল্যমান রং পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত থাকে। ফলে ১০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট ধীরে ধীরে নড়াচড়া করলে মূল্যমান লেখাটি সোনালি থেকে সবুজ রং ধারণ করে। একইভাবে ৫০০ লেখা লালচে থেকে সবুজাভ হয়। অন্যদিকে জাল নোটের ব্যবহৃত রং চকচক করলেও তা পরিবর্তন হয় না।

ছয়. প্রত্যেক প্রকার টাকার নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ও নোটের মূল্যমান জলছাপ হিসেবে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ও নোটের মূল্যমান প্রতিকৃতির তুলনায় উজ্জ্বল দেখায়। জাল নোটে এসব বৈশিষ্ট্য থাকে না।

এছাড়া স্বল্পমূল্যেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন আছে। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে জাল নোট সহজেই পরীক্ষা করা যায়। জাল নোট ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখলে শুধু একটা রেখা দেখা যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com