প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, যাদের ভিটে মাটি, আগে তো তাদের কথা ভাবতে হবে। একজনের ভিটে মাটি নিয়ে যাবেন, তাতো হয় না। তাহলে তো দেশে কোর্ট কাচারি থাকার দরকার নেই।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার করা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের পর ১০ বছর কেটে গেলেও আপিল শুনানির প্রস্তুতি সম্পন্ন না করায় রাষ্ট্রপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালতের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
রোববার (৩ মার্চ) বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ কমান্ডারের জায়গা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের অধিগ্রহণ অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় আদালত বলেন, ১০ বছরেও একটা মামলার প্রস্তুতি নিতে পারেন না, এটা লজ্জার।
আদালতে আজ (রোববার) রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাছান চৌধুরী। রিটেরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আওসাফুর রহমান।
মামলাটির শুনানির জন্য সময় চেয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী আপিলটি নিষ্পত্তি করে দিতে বললে উষ্মা প্রকাশ করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। এ আইন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা ডিসপোজঅব (নিষ্পত্তি) করবো নাকি কী করবো সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত। সেটা আপনার কাছ থেকে শুনে দিতে হবে নাকি?
এসময় সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, জনগণের যদি সুরক্ষাই না থাকে। আদালত বলে তো কিছু থাকলো না। আমরা যদি এভাবে অ্যালাও করতে থাকি।
সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলি-ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাইবে না।’ পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামীকাল সোমবার দিন ঠিক করেন দেয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আওসাফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকার মগবাজারে আদ-দ্বীন হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ১৯৪৫ সালে দেশ ভাগের সময় বীরেন্দ্র নাথ রায় তার সাড়ে ১৯ কাঠা জমির আম মোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দিয়ে যান স্থানীয় সিরাজুল হককে। এর ২০ বছর পর ১৯৬৫-৬৬ সালে এ জমির খাজনা দিয়ে নিজের নামে নামজারি (মিউটেশন) করান। এরপর দীর্ঘদিন খাজনা না দেওয়ায় ১৯৯৯ সালে সরকার এ জমির খাজনা দাবি করে মামলা করে।
‘এ মামলার পর ১৯৯৯ সালের ২৫ জুলাই সিরাজুল হক দুই হাজার ৭৯২ টাকা খাজনা পরিশোধ করে জমির ভোগ-দখলে থাকেন। এর আগে তিনি এ জমিতে থাকা ভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সংযোগ নেন। এভাবেই সিরাজুল হক এবং তার পরিবার এ জমির ভোগ-দখল করে আসছিলেন। এর মধ্যে হঠাৎ ২০০৮ সালে এ জমির খতিয়ান সংশোধন চেয়ে মামলা করে রাষ্ট্র। পরে ২০০৯ সালের ২৩ জুন এই জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দেন রমনা ভূমি অফিসের ভূমি কর্মকর্তা।’
তিনি বলেন, নোটিসে বলা হয়- বড়মগবাজার মৌজার আরএস খতিয়ান নম্বর-১, দাগ-২, ০.২৬৪৪ একর (কমবেশি) সম্পত্তি বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অনুকূলে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং সদস্যদের আবাসন সুবিদার জন্য স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ও জনস্বার্থে প্রয়োজন। এরপর এ জমির বাজারমূল্য দুই কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৫২৯ টাকা উল্লেখ করে ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর জমির প্রকৃত মালিক বীরেন্দ্র নাথকে নোটিস দেয় রমনা ভূমি অফিস।এরপর ভূমি অধিগ্রহণের গেজেটও জারি করা হয়।
আওসাফুর রহমান বলেন, গেজেট জারির কিছুদিন পর জমির ভোগ-দখলকারী সিরাজুল হকের পরিবারকে উচ্ছেদ করে প্রশাসন। এরপর ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই গেজেট চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সিরাজুল হকের স্ত্রী মালেকা সিরাজ তার পাঁচ সন্তান। এই রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১১ সালে অধিগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চেয়ে ওই বছরই আবেদন করে সরকার। চেম্বার আদালত প্রথমে আদেশ না দিলেও পরবর্তীসময়ে হাইকোর্টের আদেশে স্থিতাবস্থা (স্টেটাসকো) দেন।
তিনি আরও বলেন, তখন চেম্বারজজ আদালতের বিচারপতি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে সরকার ২০১২ সালে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ওই আপিলের শুনানির জন্য প্রস্তুতি নাই বলে বার বার সময় প্রার্থনা করে রাষ্ট্রপক্ষ। এভাবেই চলছে প্রায় ১০ বছর। এরপরও সময় চাওয়াই আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন আজ। পরে এ বিষয়ে শুনানির জন্যে আগামীকাল সোমবার (৪এপ্রিল) দিন ঠিক করেন আদালত। জানি