ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে হলে সড়কে আনফিট (ত্রুটিপূর্ণ) গাড়ি চলাচল ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে বিআরটিএ ও বিআরটিসিসহ সড়ক সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান এমপি।
সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘আসন্ন ঈদ ও বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে।
দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ও এর মূল কারণ উদঘাটনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর জোর দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, সব দুর্ঘটনার দায় চালকের ওপর চাপিয়ে দিয়ে একতরফা বিচার করলে হবে না। দুর্ঘটনার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। বিআরটিএ ও পুলিশের সক্ষমতার ঘাটতি, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, চালকের স্বল্পতা, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক, এক শ্রেণির মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার লোভ, সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব ও বেহাল সড়কের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বিআরটিসির সক্ষমতার অভাবে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার ৯০ শতাংশই বেসরকারি খাতে চলে গেছে। এটাও যাত্রী ভোগান্তির আরেকটি কারণ।
তিনি বলেন, পরিবহনে আগে চাঁদাবাজি চললেও এখন তা ৮০ শতাংশ কমানো হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে এখন আর চাঁদাবাজি হয় না। তবে বিভিন্ন শহরে চলন্ত গাড়ি থেকে পার্কিং ফি নামে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো গাড়িপ্রতি তিনশ থেকে চারশ টাকা চাঁদা আদায় করছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
সড়ক পরিবহন খাতে সরকারকে ভর্তুকি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দক্ষ চালক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা আবশ্যক। গাড়ির বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যাও দ্বিগুণ করতে হবে।
ঈদযাত্রায় যেন কোনো ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চালানো না হয় ও ত্রুটিপূর্ণ গাড়িগুলো আগেই ত্রুটিমুক্ত করে চলাচলের উপযোগী করা হয়, সেজন্য পরিবহন মালিক এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় দুঃসহ স্মৃতিচারণ করেন একযুগ আগে সড়ক দুর্ঘটনার পা-হারানো সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাঠপর্যায়ের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন- উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও পরিবহনবিষয়ক রিপোর্টার রাজন ভট্টাচার্য।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির বরাত দিয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গত বছর (২০২১ সাল) সারাদেশে পাঁচ হাজার ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯২৯ নারী ও ৭৪১ শিশুসহ মোট ছয় হাজার ২৯৮ জন নিহত এবং সাত হাজার ৪৮৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা এক হাজার পাঁচশ ২৩ জন। মোট নিহতের মধ্যে ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ১৯৩। যাদের ৯৫ শতাংশই কর্মক্ষম ছিলেন।
২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য নয় হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা জিডিপির শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সারা দেশে দুই হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই হাজার ২১৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩০৯ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী।জানি