বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য রেশমা খাতুনকে (৩৮) প্রথমে ধর্ষণ ও পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সন্দেহ এড়াতে এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবদুল লতিফ শেখ (৬০) মৃত রেশমা খাতুনের জানাজা ও দাফনকার্যেও অংশ নেন।
র্যাব বলছে, গ্রেফতার আবদুল লতিফ শেখ নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে কৌশলে মরদেহ উদ্ধারকাজে স্থানীয়দের সহায়তা করেন। দাফনকার্যে অংশ নেন এবং ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন। তাকে গতরাতে মুন্সীগঞ্জ সদর থেকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যার ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে তিনি শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ার একটি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নিখোঁজ হন। এর পর ২২ সেপ্টেম্বর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কুড়িগাঁতী গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বগুড়ার ধুনট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৪ মার্চ মুন্সিগঞ্জ সদরে অভিযান চালিয়ে আব্দুল লতিফ শেখকে গ্রেফতার করে র্যাব-১২ এর একটি দল।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লতিফ হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে লতিফ শেখ জানায়— হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৭ মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদে কম্বল বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে নিহত ইউপি সদস্যের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর লতিফ ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা ইউনিয়ন পরিষদ ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন সময় দেখা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর কৌশলে ইউপি সদস্যকে মথুরাপুর এলাকার একটি ইটভাটার পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে যান লতিফ। সেখানে পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় ভিকটিম তাকে বাধা দেন। একপর্যায়ে লতিফ তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে কারাভোগ করতে হতে পারে এমন শঙ্কায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ওই নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। পরে মরদেহ ইটভাটার পাশে রেখে পালিয়ে যান।
নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে তিনি কৌশলে মরদেহ উদ্ধারকাজে স্থানীয়দের সহায়তা করেন। দাফনকার্যে অংশ নেন এবং ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আশঙ্কা থেকে এলাকা ত্যাগ করেন। প্রথমে ছদ্মবেশে শ্রমিক হিসেবে নোয়াখালীতে কিছুদিন কাজ করেন, পরবর্তীতে মুন্সিগঞ্জে আত্মগোপন করেন।
গ্রেফতার লতিফের সম্পর্কে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ছোটবেলা থেকে ফার্নিচার তৈরির কাজ করতেন আব্দুল লতিফ। তিনি তার নিজের বাড়িতেই কর্মচারী রেখে ফার্নিচার তৈরি করে তা বিক্রি করতেন। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে বগুড়ায় একটি ধর্ষণ মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তিনি ৭ মাস কারাভোগও করেছেন। বর্তমানে ধর্ষণ মামলা চলমান। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।