বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গৌরবময় সেবার ৪৭ বছরে পদার্পণের শুভলগ্নে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ এবং ডিএমপিতে কর্মরত সকল সহকর্মীর প্রতি রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যিনি সর্বপ্রথম মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠার অভিব্যক্তি প্রকাশ ও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে যাঁরা কালের পরিক্রমায় ডিএমপির পরিধিকে বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ করতে পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ডিএমপি পরিবারের পাশে থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্যে সম্মানিত নগরবাসীকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের যে সকল সহকর্মী জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানসমূহের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি উক্ত আয়োজনসমূহ সফলভাবে উদযাপনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরলস পরিশ্রম ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও বৈচিত্র্যময় ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় দুই কোটি মানুষ বসবাস করেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কূটনৈতিক মিশনসমূহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানের অবকাঠামো এখানে অবস্থিত। বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বেশ কিছু কাজ ঢাকা কেন্দ্রিক চলমান রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন, ভিআইপি গমনাগমন, নাগরিক নিরাপত্তা, বিনিয়োগবান্ধব নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ এই শ্লোগানে আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা এবং জনগণের ‘Sense of Security’ তথা নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আজ নগরবাসীর আস্থা ও নির্ভরতা অর্জনে সফল হয়েছে।
বিশ্বায়নের বর্তমান বাস্তবতায় যুগোপযোগী পুলিশিং সেবা প্রদানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দক্ষতা, পেশাদারত্ব ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। CIMS, SIVS, DRIMS সফটওয়্যার, Hello CT Apps চালু, ট্রাফিকে POS ডিভাইস সংযোজনসহ One Stop Service এর মাধ্যমে সহজে দ্রুত নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে ডিএমপি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। জনগণের প্রত্যাশিত আইনগত সেবা সুনিশ্চিত করতে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে জিডি, মামলা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তদারকির নিমিত্তে গঠন করা হয়েছে ইন্টারনাল ওভারসাইট নামে একটি মনিটরিং সেল। গত দুই বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ধানায় আগত সেবাগ্রহীতা কোন ধরণের হয়রানির শিকার কিংবা তার প্রাপ্য সেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত করার জন্যে ফোনে কথা বলে নিবিড় তদারকি করেছে উক্ত সেল। জনবান্ধব পুলিশিং প্রবর্তনের লক্ষ্যে বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং, ওপেন হাউস-ডে এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা অর্জনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে আমরা অবিচল। বৈশ্বিক অতিমারি করোনাকালীন অসহায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়ে মানবিক পুলিশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা নিজেদের রক্তের প্লাজমা প্রদান করে অনেক সাধারণ নাগরিককে সুস্থ করে তুলতে ভূমিকা রেখে চলেছেন।
করোনাকালীন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩২ জন সদস্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। মহানগরীতে সংকটে কিংবা সেবায় যে কোন পরিস্থিতিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্মানিত নাগরিকগণের পাশেই আছে এবং থাকবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যদের আত্মত্যাগ ও পেশাদারী মনোভাব সম্মানিত নগরবাসীর জন্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ঢাকা বিনির্মাণে পাথেয় হয়ে থাকবে। একটি উন্নত, প্রযুক্তিনির্ভর, মর্যাদাশীল ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য সর্বদা সচেষ্ট। আমি প্রত্যাশা করি, নিরাপদ বসবাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়তে সকল সম্মানিত নগরবাসী আমাদের পাশে থাকবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা দিবস সফল ও সার্থক হোক।