আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির প্রলোভনে সাতশ থেকে আটশ লোকের লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। চক্রটি ‘এসএসসি পাসে চাকরি’র বিজ্ঞাপন দিতো ফেসবুকে। এভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার-তরুণদের টার্গেট করতো। এরপর বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করলে ট্রেনিংসহ বিভিন্ন খাতের নামে সাড়ে ১২ হাজার টাকা জমা নেওয়া হতো। এ চক্রের মূলহোতা স্বামী-স্ত্রীসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
র্যাব জানায়, গ্রেফতাররা সাবেক সেনা কর্মকর্তার বডিগার্ড, বাসা বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী, সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে চাকরির ভুয়া বিজ্ঞাপন দিতো। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হতো। কয়েকদিন পর যোগাযোগ করে বলা হতো চাকরি হয়েছে। তবে বিভিন্ন খাতের নামে সাড়ে ১২ হাজার টাকা জমা নেওয়া হতো। এরপর চাকরি না দিয়ে তাদের বলা হতো তাদের মতো আরও চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে। চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে পারলে কমিশন হিসেবে ১১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। মাসে অন্তত ১৪ জনকে সংগ্রহের টার্গেট দেওয়া হতো।
গ্রেফতাররা হলেন- কথিত সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামসুন্নাহার ওরফে মায়া (৩৩) ও তার স্বামী মো. জুয়েল ভূঁইয়া (২৬), কামরুজ্জামান ওরফে ডেনিস (২৪), ফারহানা ইয়াছমিন ওরফে সুবর্ণা আক্তার (২৩), মেহেদী হাসান (২১), আল মামুন ওরফে মাসুদ (২১) ও তাজবির হাসান ওরফে লোহান (১৯)।
এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ৮০টি জীবনবৃত্তান্ত, ভিজিটিং কার্ড, টাকা আদায়ের রশিদ, ১০১টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, ১৫টি আইডি কার্ড, তিনটি রেজিস্টার, আটটি মোবাইল ফোন ও নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি বলেন, আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরখান থানার আটিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি ফেসবুকে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছে। আর এই চক্রের মূলহোতা স্বামী-স্ত্রী। এ পর্যন্ত সাতশ থেকে আটশ জনের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।
লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, তারা ফেসবুকে এসএসসি পাসে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার তরুণদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। প্রতারক চক্রটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতো। চক্রটি তাদের কোম্পানিতে ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, তাদের অধীনে বিভিন্ন অফিস, ব্যাংক, এটিএম বুথ, থ্রি-স্টার অ্যাপার্টমেনট, গার্মেন্টস-টেক্সটাইল, মিল-ফ্যাক্টরি, পাওয়ার প্লান্ট, মেট্রোরেল হেড অফিস, চায়না প্রজেক্টসহ আরও কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের লাভজনক পদে কিছু কর্মচারী নিয়োগের ভুয়া বিজ্ঞাপন দিত।
তিনি আরও বলেন, তাদের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হতো। কয়েকদিন পর যোগাযোগ করে বলা হতো চাকরি হয়েছে। তবে ট্রেনিংসহ বিভিন্ন খাতের নামে ১২ হাজার ৫০০ টাকা জমা নেওয়া হতো। এরপর চাকরি না দিয়ে তাদের বলা হতো তাদের মতো আরও চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে। চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতে পারলে কমিশন হিসেবে ১১০০ টাকা দেওয়া হবে। মাসে অন্তত ১৪ জনকে সংগ্রহের টার্গেট দেওয়া হতো।
এই টাকাগুলো কোন খাতে ব্যয় করা হতো জানতে চাইলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা অর্থপাচারের কোনো তথ্য পাইনি। তবে এ অর্থ দিয়ে তারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। এছাড়া তাদের কোম্পানির প্রচারণা ও লোক নিয়োগের জন্য ফেসবুকে বুস্টিং করতেন।
যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারাই এ মামলার বাদী হবেন। এছাড়া তাদের আগের কোনো প্রতারণার তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কোম্পানির এমডি অর্থাৎ মায়া আগে অন্য আরেকটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুনভাবে প্রতারণা শুরু করেন তিনি। তারা আট মাস ধরে এই কাজ করে আসছিলেন।