ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের মেয়ে নিপা আক্তার। সূর্য মিয়া ও মিনা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে নিপা চতুর্থ। নিপার বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। এক বছর আগে মারা যান তিনি। সূর্য মিয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে সৈনিক বানাবেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তবে নিপা তারা বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সৈনিক হিসেবে যোগদান করে শারীরিক উৎকর্ষে সেরা নবীন সৈনিকের (মহিলা) পুরস্কারও পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের বীর উত্তম মুজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবির ৯৭তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে নাগরিক খবরের সঙ্গে কথা হয় নবীন সৈনিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক শপথ নেওয়া নিপা আক্তারের। এসময় তার সৈনিক হয়ে ওঠা ও নিজেকে গর্বিত সন্তান মনে করার নানা কথা উঠে আসে।
নিপার বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে সৈনিক বানাবেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। এই স্বপ্নের অপূর্ণতা রেখেই সূর্য মিয়া পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তবে বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন বিজিবির ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিপা আক্তার। ওই ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের কাছ থেকে শারীরিক উৎকর্ষে সেরা নবীন সৈনিক (মহিলা) হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন নিপা আক্তার। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল সৈনিক হবো। আমার বাবারও স্বপ্ন ছিল এটা। বাবা নেই, তাই বাবা স্বপ্নপূরণটা দেখে যেতে পারলেন না। এত বড় পুরস্কার পেয়েছি- এটা যদি বাবা দেখতেন, তাহলে তার কষ্টটা দূর হয়ে যেতো। কিন্তু বাবা দেখে যেতে পারলেন না।
এ অর্জনের পর মায়ের আনন্দ বা অনুভূতি কেমন ছিল জানতে চাইলে নিপা বলেন, আমার মা এত খুশি যে তিনি একেবারে কান্না করে দিয়েছেন। যেহেতু এটি আমার বাবার স্বপ্ন ছিল, তাই সবাই খুব খুশি। শারীরিক উৎকর্ষে বিজিবির সেরা নবীন সৈনিকের পুরস্কার গ্রহণ করছেন নিপা আক্তার।
বিজিবিতে যোগ দিয়ে পুরস্কার পেলেও নিপা জানতেন না কীভাবে বিজিবিতে নিয়োগ পেতে হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নিপা বলেন, বিজিবিতে যে কীভাবে আসতে হয়, সার্কুলার দিয়ে আসতে হয় সেটা জানতাম না। যখন দেখতাম আশপাশের লোকেরা দেয় তখন তাদের দেখে আমি উৎসাহ পেতাম। আমি এখানে মূলত যতটুকু এসেছি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়। কেউ আমাকে সহযোগিতা করেনি। আমি যতটুকু বুঝেছি ততটুকুই করেছি।
নারীদের নানা প্রতিকূলতায় নিজেকে কীভাবে এই ধরনের পেশায় ও প্রশিক্ষণকে সহজ করেছেন জানতে চাইলে বিজিবির নবীন এই সদস্য জানান, প্রশিক্ষকরা আমাদের শেখাতেন। সেখানে এতটুকুও ভাবিনি যে আমি পারবো না। আমি যতটুকু দেখেছি চেষ্টা করেছি। না বুঝলে বলেছি স্যার এটা আমি পারছি না, এরপর সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কখনো পিছিয়ে যায়নি।
জীবনে কখনো অস্ত্র না দেখা নিপা এখন গুলি ছুড়তে ভয় পান না। প্রথম গুলি ছোড়ার অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, মনের উৎসাহ নিয়েই করেছি। কিন্তু একটু ভয় লাগবেই। সিভিলে যখন ছিলাম তখনতো আমরা এগুলো দেখিনি। বাস্তবে আগে দেখিনি, এখন এখানে এসে হাতে ধরেছি।
নিপা আক্তার বলেন, প্রথমে বুকটা একটু ধড়ফড় ধড়ফড় করছিল। কিন্তু এখন আর করে না, মনে হয় যে আরও করি। এখন শত্রু দেখলে কখনোই পিছিয়ে যাবো না।
একজন সৈনিক হিসেবে যেমন গর্বিত, বাবার মেয়ে হিসেবেও নিজেকে গর্বিত অনুভব করেন নিপা। তিনি বলেন, বিজিবির সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত। আমি গর্বিত যে একজন সৈনিক হতে পেরেছি। এমন একটি পুরস্কার পেয়েছি যেটি আমাকে অনুপ্রাণিত করবে, দিনে দিনে এগিয়ে যেতে সাহস যোগাবে। কোনো যুদ্ধ হলেও আমি এগিয়ে যাবো, কখনো পিছিয়ে যাবো না। আগে মনোবল এতটা ছিল না, এই বাহিনীতে এসে মনোবল আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।