রাজধানীর ধানমন্ডি ২৮ নম্বর রোডে অবস্থিত ২১ নম্বর বাসার ই-৫ ফ্ল্যাটে থাকতেন বৃদ্ধা আফরোজা বেগম। তার দেখভাল করতেন গৃহপরিচারিকা দিতি।
১০ বছর ধরে ভবনসহ ভিকটিমের ফ্ল্যাটের দেখভাল করতেন মো. বাচ্চু মিয়া (৩৪)। দীর্ঘদিনের সম্পর্কে বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছিলেন বাচ্চু মিয়া। অথচ সেই বাচ্চু মিয়াই নতুন গৃহপরিচারিকা সুরভী আক্তার নাহিদাকে নিয়ে স্বর্ণালঙ্কার লুটের পরিকল্পনা করেন। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর লোবেলিয়া অ্যাপার্টমেন্টের ওই বাসায় স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনায় বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগমকে।
খুনের দৃশ্য দেখে ফেলায় হত্যা করা হয় অন্য গৃহপরিচারিকা দিতিকে। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলেও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, বাচ্চুর প্রতি বিশ্বাস আর বাচ্চুর লোভই কাল হয়েছে। খুন হতে হয়েছে দুটো তাজা প্রাণকে। বাচ্চুর লোভের ফাঁদে পড়ে খুনের অংশীদার হয় নতুন কাজের মেয়ে সুরভী।
সুরভী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে। শিগগির আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করবে পিবিআই।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের (উত্তর) পুলিশ সুপার আহসান হাবীব পলাশ।
তিনি বলেন, খুনের ঘটনায় গত ৩ নভেম্বর মৃত আফরোজা বেগমের মেয়ে অ্যাডভোকেট দিলরুবা সুলতানা রুবা (৪২) ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। ওই ঘটনায় ধানমন্ডি থানা ও ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ২৬ দিন তদন্ত করে মূল দুই আসামি বাচ্চু ও সুরভীসহ সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করা হয়। সুরভী দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেয়।
তবে মামলার বাদীর নারাজি ও পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআই ওই বছরের ১ ডিসেম্বর তদন্ত শুরু করে।
বাচ্চু মিয়া ও সুরভী মূল হত্যাকারী:
পিবিআই পুনরায় গ্রেফতার সুরভী ও বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে এসে সুরভীর দেওয়া তথ্যমতে তার আগারগাঁওয়ের ভাড়া বাসার মাটি খুঁড়ে স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। এ সময় সুরভী মোবাইল বিক্রির কথা স্বীকার করে। সুরভী দোষ স্বীকার করে পুনরায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
হত্যার ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে আহসান হাবীব পলাশ বলেন, মো. বাচ্চু মিয়া দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভিকটিম আফরোজা বেগমের বাসায় বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করে আসছিলেন। তবে বাচ্চু মিয়ার মধ্যে বিলাসী জীবন-যাপনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে বাসায় অর্থ-সম্পত্তির প্রতি লোভ জন্মায়।
ওই সময় আরও একজন গৃহপরিচারিকাকে খুঁজছিলেন মামলার বাদী দিলরুবা। ওই সুযোগটিই কাজে লাগান বাচ্চু। সুরভী আক্তার নাহিদা কাজের খোঁজে ধানমন্ডি আসে। পথে বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে পরিচয়, ফোন নম্বর আদান-প্রদান হয়। বাচ্চু মিয়া পরবর্তীতে সুরভীকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্ণালঙ্কর লুটের পরিকল্পনা করেন।
বাচ্চু মিয়া নাহিদাকে লোভনীয় প্রলোভন দেখায় ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগী সুরভী আক্তারকে দিয়ে আগারগাঁও মার্কেট থেকে ছুরি কেনে। নাহিদাকে নতুন কাজের লোক সাজিয়ে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর ওই বাসায় নিয়ে যায়। কাজের জন্য কথাবার্তা বলে। নাহিদা প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করে ও কিছু কাজও করে।
ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে বাচ্চু মিয়া বাসায় ঢুকে আলমারির চাবি চান। এসময় সুরভীও ছুরি নিয়ে ভিকটিমের শয়নকক্ষে যায়। চাবি দিতে না চাইলে বাচ্চু ও সুরভী ছুরি দিয়ে বৃদ্ধা আফরোজার গলায় ও বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। এরপর চাবি নিয়ে আলমারি খুলে একটি স্বর্ণের চেন, দুটি স্বর্ণের চুড়ি, একটি মোবাইল সেট হাতিয়ে নেয়।
অন্য কাজের মেয়ে দিতি পাশের কক্ষ থেকে দেখে ফেলায় তাকেও নাহিদা ছুরি দিয়ে একাধিক আঘাত করে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করেন দুজনই। পরে পাশের ফ্ল্যাটেই বসবাসকারী মেয়ে ও মামলার বাদী দিলরুবা কাজের লোক পাঠিয়ে জানতে পারেন খুনের ঘটনা। জানি